কোন্নগর পুরসভায় টেন্ডার নিয়ে গোলমাল

আঁটুনি সার, ফস্কা গেরোয় ‘অনলাইন’ 

সম্প্রতি কোন্নগর পুরসভায় কাজ করতে গিয়েও তেমনই অভিযোগ তুলেছে কলকাতার এক সংস্থা। তাদের অভিযোগ, অনলাইনে দরপত্র দেওয়ার কাজ শেষ হলেও একটি বিশেষ কিছু নথি জমা দেওয়ার জন্য সশরীরে হাজির হতেই হয় পুরসভায়।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৮ ০১:১২
Share:

দুর্নীতি বন্ধ করতেই চালু হয়েছিল ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া। পঞ্চায়েত, পুরসভা— প্রশাসনের সবস্তরে, সব রকম কাজের জন্যই ‘অনলাইন’ দরপত্র আহ্বানের নীতি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই তা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সর্ষের মধ্যে থেকে ভূত যে তাড়ানো সম্ভব হয়নি— তা স্পষ্ট। এই অভিযোগ উঠছে বার বার।

Advertisement

সম্প্রতি কোন্নগর পুরসভায় কাজ করতে গিয়েও তেমনই অভিযোগ তুলেছে কলকাতার এক সংস্থা। তাদের অভিযোগ, অনলাইনে দরপত্র দেওয়ার কাজ শেষ হলেও একটি বিশেষ কিছু নথি জমা দেওয়ার জন্য সশরীরে হাজির হতেই হয় পুরসভায়। আর তখনই শুরু হয় ভয় দেখানোর প্রক্রিয়া। পুরসভার দরজা থেকে ফেরানে হয় সংস্থার কর্মচারীকে।

কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ না করলে ওই সংস্থা কাজের বরাত পাবে না। তখনই আসরে নামবে অন্য ঠিকাদার। অভিযোগ, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন শাসকদলেরই একাংশ। যদিও কোন্নগরের ক্ষেত্রে ওই সংস্থা শেষ পর্যন্ত রেজিস্ট্রি পোস্টে ওই নথি জমা করেছে। আর তার ফলেই প্রকাশ্যে এসেছে দুর্নীতির ছবি। কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগের কথা শুনেছি। তবে সে সময় আমি পুরসভায় ছিলাম না। কিন্তু কর্মীদের বলা আছে। কোনও সমস্যা হবে না।’’ যদিও পুরকর্মীদের একাংশই বলেছেন, রেজিস্ট্রি চিঠিও যাতে পুরসভায় না পৌঁছয়, সে ব্যবস্থাও করা হয়েছিল এক শ্রেণির ঠিকাদারের মদতে। তবে শেষ পর্যন্ত চিঠি পৌঁছেছে।

Advertisement

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন্নগর পুর এলাকায় সিসি ক্যামেরা ও এলইডি আলো লাগানোর কাজ শুরু হচ্ছে। সে কাজের জন্য টেন্ডার পেশ করেছিল কলকাতার সংস্থাটি। কম মূল্য চেয়ে বরাতও পেয়ে যায় ওই সংস্থা। কিন্তু অভিযোগ, পুরসভায় নথি জমা করতে এলে তাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয় পুরসভার দরজা থেকে।

এমন অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। হুগলির প্রায় সব পুরসভাতেই এমন একটি পদ্ধতি চালু রয়েছে বলে অভিযোগ। আর সে ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক রকম সমীকরণ। অভিযোগ, স্থানীয় নেতাদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকেই। তা ছাড়া আছে ‘কমিশন’। অর্থাৎ কাজের বরাত অনুযায়ী মূল্য ধরে দিয়ে খুশি করতে হয় এলাকার ‘কেষ্টবিষ্টু’দের। উত্তরপাড়া, কোন্নগর এলাকায় এমন চক্র নতুন নয়। প্রোমোটার, ব্যবসায়ীদের থেকে তোলাবাজিও হয় প্রায় প্রতিদিন। সরকারি কাজেও সেই একই পদ্ধতি চলতে থাকে বলে অভিযোগ।

কোন্নগরের ঘটনায় শাসকদলের কাউন্সিলরদের একাংশই অভিযোগ করছেন, ‘‘এখানে কিছু খাস ঠিকাদার রয়েছে। তারাই কাজ পায়। অন্যরা এলে যে কোনও উপায়ে ভাগিয়ে দেওয়াই নীতি।’’ এর আগে এলাকায় নর্দমার তৈরির সময়ও একই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। একই ভাবে শ্রীরামপুর পুরসভায়ও মারধর করা হয়েছিল বরাত পাওয়া এক সংস্থার কর্মীদের। জেলা সদর চুঁচুড়ায় আবার উত্তরপাড়ার একটি সংস্থার কর্মীকে আটকে রাখা হয়েছিল ঠিকাদারদের সংগঠনের অফিসে। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর মোবাইল। পরে ওই সংস্থার তরফে পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয় সেই সময়। অভিযোগ, খাস তালিকাভুক্ত ওই সব ঠিকাদারদের মধ্যে অনেকের নামই পুলিশের কালো খাতায় রয়েছে।

কিন্তু সে সবের বাইরে গিয়ে প্রশ্ন উঠছে যেখানে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ‘অনলাইন’ আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানে সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুরসভায় নথি জমা করার ব্যবস্থা রাখা হয় কেন? বিরোধী কাউন্সিলররা বলছেন, ‘‘ওটাই তো ফাঁক।’’ রাজ্য অর্থ দফতরের এক প্রবীণ আধিকারিক বলেন, ‘‘এখন তো ‘অফলাইন’ শব্দটাই বেআইনি। পুরোটাই অনলাইনে হবে। পুর কর্তৃপক্ষের যদি অন্য কোনও উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে কাজটা ‘অনলাইন’-এই নিয়ম মাফিক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বরাত পাওয়া সংস্থার কর্মীদের হেনস্থার প্রসঙ্গও আসে না।’’

এ বিষয়ে অবশ্য উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, ‘‘ঘটনাটা জানি না। তবে এমনটা হওয়া উচিত নয়। আমি প্রয়োজনে ওই সংস্থা ও পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement