বন্ধুদের সঙ্গে ইদ পালন করবে বলে মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল আফরোজ। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আসতেই আর একটি বাইকে করে জনা তিনেক দুষ্কৃতী সেখানে এসে আফরোজকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি লাগে আফরোজের বাঁ পায়ে। তার চিৎকার চেঁচামেচিতে লোকজন জড়ে হলে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। আহত কিশোরকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, আহত ছাত্র চিকিৎসাধীন। একটু সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
হুগলির মগরা থানার বোড়োপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনা স্থানীয় মানুষের মনে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনই আগ্নেয়াস্ত্র ও দুষ্কৃতী নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ফের প্রশ্ন তুলে দিল। দিন কয়েক আগে চন্দননগরেও গুলি চালিয়ে, বোমা মেরে এক যুবককে খুনের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। বার বার এমন ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সদর মহকুমার মানুষ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁশবেড়িয়ার বোড়োপাড়া ৩ নম্বর গুমটি এলাকার বাসিন্দা আফজল আলি খানের বড় ছেলে আফরোজ স্থানীয় একটি হিন্দি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। এদিন সকালে ইদের নমাজ সেরে বাড়িতে ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোলাকুলি সেরে বন্ধুদের সঙ্গে ইদ পালন করবে বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরোয়। পরিবারের লোকজনের দাবি, বাড়ি থেকে কিছু দূরে বোড়োপাড়ার মোড়ে হেলমেট পরা জনা তিনেক দুষ্কৃতী অন্য একটি মোটরসাইকেলে করে এসে আফজলকে গুলি করে। তার বাঁ পায়ে গুলি লাগে। গুলির আওয়াজ, আফজলের চিৎকারে লোকজন বেরিয়ে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থাতেই মোটর সাইকেলে বাড়িতে ফিরে আসে আফজল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসার জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে বের করা হয় গুলি।
কিন্তু হঠাৎ আফজলের উপর আক্রমণ কেন?
তার পরিবার সূত্রে খবর, গত এপ্রিল মাসে ওই এলাকাতেই আফরোজের দাদু আখতার আলি খান দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন। তিনি মাটির ব্যবসা করতেন। ব্যবসার কাজে গরিফা থেকে বাড়ি ফেরার সময় দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা যান তিনি। আফরোজের বাবা ও কাকা গ্যাঞ্জেস চটকলে কাজ করেন। চটকলে কাজ করার পাশাপাশি কাকা বাবু আলি খান বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে মাটির ব্যবসা করেন। এই ব্যবসাকে ঘিরে তাদের সঙ্গে অনেকের শত্রুতা তৈরি হয়েছিল। তার জেরেই এই আক্রমণ।
আফরোজের বাবার দাবি, দুষ্কৃতীরা তাঁর ভাই ও আফরোজের কাকা বাবুকেই মারতে এসেছিল। আফরোজকেই বাবু মনে করে তারা গুলি চালায়। তিনি বলেন, ‘‘ইদের দিন নমাজ পড়ার পর বাড়িতে ফিরে সকলে মিলে আনন্দ করছিল। ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করবে বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরে এসে সব জানায়। যারা গুলি চালায় তাদের সবাই হেলমেট পরা থাকায় ও কাউকেই চিনতে পারেনি।’’
বাবু আলি খানের বক্তব্য, ‘‘মিলে কাজ করার পাশাপাশি মাটির ব্যবসা করি। এই নিয়ে এলাকায় অনেক শত্রুও তৈরি হয়। আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এদিন আমাকে ভেবেই ওরা ভাইপোকে গুলি করে মারতে চেয়েছিল।’’