—প্রতীকী ছবি
অবিলম্বে উৎপাদন চালু করতে শ্রীরামপুরের বন্ধ ইন্ডিয়া জুটমিল কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি জানাল রাজ্য সরকার।
আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে এই জুটমিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ চলছে। মিলটি খোলা নিয়ে সোমবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সেখানেই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক মিলের মালিক সঞ্জয় কাজোরিয়ার কাছে ওই আর্জি জানান বলে সরকারি সূত্রের খবর।
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় ওই বৈঠকে মন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যের সহকারী শ্রম-কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত। শ্রীরামপুরের উপ শ্রম-কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী, মিল মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন। শ্রমিক সংগঠনগুলিলর তরফে অবিলম্বে মিল খোলার দাবি জানানো হয়। মলয়বাবুও একই কথা বলেন। নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে এখন মিল খোলার পরিস্থিতি নেই বলে দাবি করেন সঞ্জয় কাজোরিয়া। সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। শ্রম দফতরের আধিকারিকরা জানান, কাল, বুধবার ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেও মলয়বাবুর উপস্থিত থাকার কথা।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের শ্রমিক নেতা তথা শ্রীরামপুরের পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘শ্রমিকরা খুবই সঙ্কটে আছেন। তাঁরা চাইছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিল খোলা হোক। সরকারও চেষ্টা করছে। আশা করছি, শীঘ্রই মিল খুলবে।’’ এআইইউটিইউসি-র সর্বভারতীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অবিলম্বে নিঃশর্তে মিল খুলতে হবে, এই দাবিই জানিয়েছি। মন্ত্রীও দ্রুততার সঙ্গে মিল খুলতে বলেছেন মালিকপক্ষকে। ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আশা নিয়েই বুধবার বৈঠকে যাব। শ্রমিকরা আর কত দিন অভুক্ত থাকবেন?’’
এই জুটমিলে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। পরোক্ষ ভাবেও বহু মানুষের রুজিরুটি এই মিলের উপরে নির্ভরশীল ছিল। কাঁচা পাটের অভাবের কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ মে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। আর্থিক সঙ্কটের কথাও বলা হয়। শ্রমিকরা বেকায়দায় পড়েন। অনেকে ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। রোজগার হারিয়ে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের একাংশ বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। শ্রমিকের হাতে টাকা না থাকায় স্থানীয় ছোটখাটো ব্যবসা মার খাচ্ছে।
মিল খোলার দাবিতে নানা সময়ে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন করেছে। প্রশাসনিক বৈঠকও হয়। তবে কাজের কাজ হয়নি। বছর খানেক ধরে মিল খোলার চেষ্টায় প্রশাসনিক উদ্যোগেও ভাটা পড়ে বলে শ্রমিক-নেতাদের একাংশের অভিযোগ। সন্তোষের কথায়, ‘‘এর আগে শেষ বৈঠক হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারি মাসে। ফের সরকারের চেষ্টাচরিত্র শুরু হওয়ায় ভাল লাগছে।’’
এই মিলের কাছেই ‘শ্রমিক মেলা’র আয়োজন হচ্ছে। সম্প্রতি জুটমিলের কিছু শ্রমিক মেলার মাঠের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। মিল না খুলে ‘শ্রমিক মেলা’ করা যাবে না বলে স্লোগান তোলেন। সংশ্লিষ্ট নানা মহলে সেই খবর পৌঁছয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের তরফে মিলের অচলাবস্থা নিয়ে মালিকপক্ষ এবং সরকারের সদিচ্ছার অভাবের অভিযোগ তোলা হয়। তার পরেই শ্রম দফতর নড়েচড়ে বসে।
সূত্রের খবর, একটি জমি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য মিল খোলা যাচ্ছে না বলে মালিকপক্ষ দাবি করেন। তাঁদের বক্তব্য, ওই সমস্যা না মিটলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে মাসখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। কথা বলেন শ্রমমন্ত্রী মলয়বাবুর সঙ্গেও। কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকেও চিঠি লেখেন সুদীপ্তবাবু।