অনিশ্চয়তা: এমন ছবি এ বার শহরে দেখা যাবে না, মনে করছেন বেশির ভাগ পুজো উদ্যোক্তাই। —ফাইল িচত্র
এ বার কি ঘটপুজো চন্দননগরে!
সাড়ে তিন মাস বাদে জগদ্ধাত্রী পুজো। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে ওই সময়ে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অনুকূল হয়ে যাবে, এই আশা চন্দননগরের কোনও পুজো কমিটিই করছে না। পরিস্থিতি না-শুধরোলে বিশালাকার প্রতিমার পরিবর্তে ঘটপুজো করেই দেবী-আরাধনা সারা হতে পারে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।
আগেভাগে এ ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়েছে চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির কার্যকরী সমিতি। রবিবার বৈঠক হয়। কমিটির সদস্যদের বক্তব্য, পরিস্থিতি কিছুটা শুধরোলে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং খোলা মণ্ডপে পুজো হতে পারে। কিন্তু ধারাবাহিকতা ছেদ করে কম উচ্চতার প্রতিমা পুজোর পক্ষপাতী তাঁরা নন। সে ক্ষেত্রেও, পুজোর শুরু থেকে বিসর্জন— দূরত্ব-বিধি কতটা মেনে সব আয়োজন করা যাবে, সে প্রশ্ন থাকছেই। তাই স্বাভাবিক জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নির্মাণ করতে সরকারি বিধিনিষেধ থাকলে ঘটপুজো করাই শ্রেয় বলে মনে করছেন তাঁরা।
অর্থাৎ, হয় ঐতিহ্যশালী চিরাচরিত সুউচ্চ জগদ্ধাত্রী প্রতিমা, নয়তো ঘটপুজো। ঘটপুজো হলে এ বার যে সব পুজো কমিটির বিশেষ জয়ন্তী রয়েছে, তারা আগামী বছর তা উদ্যাপন করতে পারবে। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, ‘‘কার্যকরী সমিতির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সেপ্টেম্বর মাসে কমিটির সাধারণ সভায় পেশ করা হবে।’’
বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তাদের অভিমতও একই। বাগবাজার সর্বজনীনের কর্মকর্তা ভাস্কর দে সরকার বলেন, ‘‘ওই প্রস্তাব সময়পোযোগী এবং যথপোযুক্ত। উচ্চতার জন্যই এখানকার জগদ্ধাত্রী বিশ্বে বন্দিত। ছোট বা মাঝারি প্রতিমার নিদর্শন রাখতে চাই না।’’ একই বক্তব্য ভদ্রেশ্বর গঞ্জের কর্তা দেবব্রত বিশ্বাসের। খলিসানি সর্বজনীনের কর্মকর্তা নিমাইচন্দ্র দাসের বক্তব্য, ‘‘সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে ছোট মূর্তি পুজো করার পক্ষপাতী নই।’’
এই ভাবনার পিছনে অন্য একটি কারণ আছে বলেও অনেকে মনে করছেন। প্রশাসনের তরফে গত কয়েক বছর ধরে প্রতিমার উচ্চতা কমানোর আবেদন করা হলেও ঐতিহ্যের কথা বলে পুজো কমিটিগুলি সম্মত হয়নি। বিভিন্ন কমিটির কর্তাদের ধারণা, কম উচ্চতার প্রতিমা পুজো করা হলে ভবিষ্যতে প্রশাসনের তরফে সেই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে একই ভাবে পুজো করার জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে। তাই, এই নজির তাঁরা তৈরি করতে চান না।
করোনা পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ থেকে নানা উৎসব পেরিয়েছে নিঃশব্দে। মাহেশ, গুপ্তিপাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় রথের রশিতে টান পড়েনি। দুর্গাপুজোর ব্যাপারে রাজ্য সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। পুজো হলেও বহু কমিটি বাজেট কাটছাঁটের কথা জানিয়েছে। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়ে যায়
মাঝ-অগস্ট থেকেই। পুজোকে কেন্দ্র করে শহরে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়। বিভিন্ন পেশার মানুষ দু’পয়সা আয় করেন। পুজো সে ভাবে না-হলে এই বিপুল পরিমাণ টাকার ব্যবসা মার খাবে। সকলে ধরেই নিয়েছেন, আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো এ বার সম্ভব নয়।
নামে ‘চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী’ হলেও এ পুজোর বিস্তার ভদ্রেশ্বর পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় কমিটির অধীনে ১৭১টি পুজো কমিটি রয়েছে। চিরাচরিত প্রতিমা পুজো, নাকি ঘটপুজো— এ নিয়ে শহরে চর্চা শুরু হয়েছে। ‘কমেন্টে’ ভাসছে সোশ্যাল মিডিয়াও। চন্দননগরের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুউচ্চ প্রতিমা আমাদের জগদ্ধাত্রী পুজোর
ঐতিহ্য তো বটেই। সে ক্ষেত্রে বড় প্রতিমা পুজো করতে না পারলে ঘটপুজো করার ভাবনা আসতেই পারে। সাধারণ মানুষ কী চান, সেটাও বুঝতে হবে। পুজোর সঙ্গে সাধারণ মানুষের ভাবাবেগ জড়িত।’’