শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়ার অবস্থা সঙ্কটজনক, বলছে সমীক্ষা
Underground Water

৬টি ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমেছে, উদ্বেগ হুগলিতে

ছ’টি ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলস্তর মারাত্মক নেমে গিয়েছে হুগলিতে। তার মধ্যে শহরাঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকা— দুই-ই আছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও পীযূষ নন্দী

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:১৬
Share:

সচেতনতা: ভুগর্ভস্থ জলের সঙ্কট বোঝাতে চলছে শিবির। চণ্ডীতলা ১ ব্লকে। ছবি: দীপঙ্কর দে

ছ’টি ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলস্তর মারাত্মক নেমে গিয়েছে হুগলিতে। তার মধ্যে শহরাঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকা— দুই-ই আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি ব্লকে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রালয়ের অধীন ভূ-জল বোর্ড এবং জেলা প্রশাসন যৌথ ভাবে সচেতনতামূলক জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়েছে। খুব কম জলে এবং কম সময়ে ধান চাষে ‘জিরো টিলেজ’ এবং ‘শ্রী’ প্রযুক্তির প্রয়োগে বিশেষ জোর দিয়েছে কৃষি দফতর।

Advertisement

যে ছ’টি ব্লকে সমস্যা, সেগুলি হল— আরামবাগ, ধনেখালি, গোঘাট-২, পান্ডুয়া, চণ্ডীতলা-১ এবং শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া। ভূ-জল বোর্ডের কলকাতার আঞ্চলিক অধিকর্তা অম্লানজ্যোতি কর বলেন, ‘‘চাষের পদ্ধতি বদলের প্রয়োজন। শহরাঞ্চলে আবাসনগুলি যথেচ্ছ ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নিচ্ছে। বৃষ্টির জল মাটিতে ফেরানোর ব্যাপারে এখনই সার্বিক সচেতনতা জরুরি। না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়বে।’’

কয়েক বছর আগে ভূ-জল বোর্ড হুগলিতে যে সমীক্ষা চালিয়েছিল, তাতে শুধুমাত্র গোঘাট-২ এবং বলাগড় ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল। বলাগড়ে ভূগর্ভস্থ জলের আর্সেনিক সমস্যাও দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ওই বোর্ডের সমীক্ষকেরা দেখেন, হুগলিতে জলস্তর নেমে গিয়েছে আরও কিছু ব্লকে। তার মধ্যে ছ’টি ব্লকের অবস্থা শোচনীয়। এর মধ্যে চণ্ডীতলা-১ ব্লকে আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে বলে জানান অন্যতম সমীক্ষক অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সমীক্ষকেরা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লক নিয়ে। কারণ এই ব্লকে চাষ কম হয়। ফলে, ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কম হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে মিলেছে উল্টো ছবি। অম্লানজ্যোতিবাবু বলেন, ‘‘এই ব্লকটিতে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে প্রতিটি আবাসনে মাটির জল তোলা হচ্ছে। ফলে, জলস্তরের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এই ব্লকের পুরসভাগুলিকে নতুন আবাসনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে জল তোলা নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’’

শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ছাড়া বাকি পাঁচ ব্লকে অবশ্য ধান চাষ হয়। তাতে আধুনিক পদ্ধতিতে স্রেফ মাটিয়ে ভিজিয়ে চাষ করায় জোর দিচ্ছে ভূ-জল বোর্ড। ভুট্টার মতো চাষে (জলের খরচ কম) চাষিদের উৎসাহিত করতেও জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক অশোক তরফদার বলেন, “ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তিগুলিতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের কাছে গ্রহণযোগত্য বাড়াতে শ্রী, জ়িরো টিলেজ, ড্রাম সিডার, সুধা ইত্যাদি পদ্ধতি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা প্রচার, শিবির করা হচ্ছে।”

চণ্ডীতলা-১ ব্লকের বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা চাষিদের সচেতন করার ক্ষেত্রে সারা বছরই কৃষি দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ চলে। সম্প্রতি আমরা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় মানুষজন, শিক্ষক এবং কৃষকদের নিয়ে একটি সেমিনার করি। সমাজের সব স্তরের মানুষকেই জলস্তর নিয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি।’’

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘জ়িরো টিলেজ’ চাষ হল বীজতলা তৈরি না করে সরাসরি কর্ষণহীন জমিতে যন্ত্রের সাহায্যে ধান বপন করা। সাধারণভাবে বীজতলা তৈরি করতে যে বিপুল পরিমাণ জল লাগে এখানে তা লাগবে না। চাষ শুরু থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত চিরাচরিত চাষের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ কম জল খরচ হবে। যেহেতু বীজ সরাসরি জমিতে ফেলা হয়, তাই ধান তৈরি হওয়ার সময়ও ১৬০ দিনের চেয়ে ২০-৩০ দিন কম লাগে। এক বিঘা জমিতে মাত্র ২ কেজি বীজ লাগে। সর্বোপরি, এই পদ্ধতিতে চাষ করলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ঠিক থাকে।

‘শ্রী’ পদ্ধতিতেও (সিস্টেম অব রাইস ইন্টেনসিফিকেশন) খুব কম জলে এবং কম সময়ে চাষ সম্ভব। জমিতে জল জমিয়ে রাখার প্রয়োজন হয় না। খালি জমি ভেজা থাকলেই যথেষ্ট। বোরো চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর জলের সাশ্রয় হয়। বীজতলা থেকে ৩০ দিনের বদলে ১০-১২ দিনের মাথায় ধানের চারা জমিতে

রোপণ করা যায়। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে বীজতলা তৈরিতে যেখানে বিঘা প্রতি ৭-৮ কেজি বীজের প্রয়োজন সেখানে এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বীজ লাগে ১ কেজি। ধানের ফলনও ৪০-৫০ শতাংশ বেশি পাওয়া যায়।

বোরো চাষের ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জল অনেক কম লাগে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement