খরিদ্দারের আশায়।—নিজস্ব চিত্র।
বছরের বারো মাসই দিনভর গমগম করত এই হাট। কিন্তু ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই তাল কেটেছে হাটের। ৫০০, ১০০০-এর নোটে বেচাকেনা বন্ধ। বিকিকিনির পারদ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা ভেবেই দিন গুনছে শেওড়াফুলি হাট।
হাওড়া-মেইন শাখায় হুগলির শেওড়াফুলি স্টেশন লাগোয়া এই হাট চালু হয়ে যায় কাকভোরেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা এসে কাঁচা আনাজ কিনে নিয়ে যান। অনেক চাষি সব্জি নিয়ে সরাসরি খুচরো বিক্রি করেন। ভোর ৪টে থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। সব মিলিয়ে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চলে প্রতিদিন। যার প্রায় পুরোটাই হয় নগদে।
এ ছাড়া প্রতিদিন ছোট বড় মিলিয়ে দু’শোরও বেশি ট্রাক ঢোকে এখানে। হুগলি, হাওড়া, নদিয়া, বর্ধমান-সহ নানা জায়গা থেকে কাঁচা সব্জি আসে। ভিন্ রাজ্য থেকেও আসে। হুগলির বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার বহু জায়গায় সব্জি যায় এখান থেকে। কিন্তু নোট কাণ্ডের পর থেকে এই ছবিটাই উধাও।
কী রকম?
কৈকালা হাটতলার সব্জি বিক্রেতা বিকাশ চক্রবর্তী প্রতিদিন শেওড়াফুলি থেকে সব্জি কিনে নিয়ে যান। রবিবার দুপুরেও এসেছিলেন। এক পাল্লা (পাঁচ কিলোগ্রাম) টম্যাটো কিনলেন তিনি। বললেন, ‘‘সাধারণত ২-৩ পাল্লা কিনি। কিন্তু কেউ পাঁচশো টাকার নোট নিচ্ছেন না। যে ক’টা ১০০ বা ৫০ টাকার নোট পাচ্ছি, তা দিয়েই কিনতে হচ্ছে।’’ শ্রীরামপুরের পাঁচুবাবুর বাজারের সব্জি বিক্রেতা বনমালি পাত্রর কথায়, ‘‘৫০০, ১০০০ টাকার নোট চলছে না। সমস্যা তো হচ্ছেই। কিন্তু ধৈর্য ধরা ছাড়া কী-ই বা করার আছে!’’
নীরজ সিংহ পাইকারি দরে পাতিলেবু বিক্রি করেন। নোটের গুঁতোয় বেসামাল তিনিও। বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে গাড়ি আসছে না। তা ছাড়া, ওরাও ১০০ টাকার নোটে দাম চাইছে। মহা ফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছি। পরিস্থিতির জন্য লেবুর দামও বেড়েছে। ৮০টাকা শ’য়ের লেবু বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। তাও খদ্দেরও নেই।’’
সব্জির আড়তদার মুকুল সাহা বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে বিক্রিবাটা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। আমরা পাঁচশো, হাজারের নোট নিতে পারছি না। অনেক সময় খদ্দেরদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। যত দ্রুত এই সমস্যা মিটে যায়, তত ভাল। না হলে ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’
বাবু ঘোষ নামে এক আড়তদারের কথায়, ‘‘সব্জি ব্যবসার সঙ্গে প্রচুর গরিব মানুষ জড়িত। অনেকেরই ব্যাঙ্ক সম্পর্কে ধারণা নেই। নোট বাতিলের ধাক্কায় তাঁরা মুশকিলে পড়েছেন। আমাদেরও প্রচুর লোকসান হচ্ছে। এই অবস্থার দ্রুত বদল দরকার।’’
ভরা বাজারের আশায় এখন এটাই চাইছেন ব্যবসায়ীরা।