স্নেহাশিস দাশগুপ্ত।—ফাইল চিত্র।
ফুটবলার স্নেহাশিস দাশগুপ্ত ওরফে রাজাকে খুন করা হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিল তাঁর পরিবার। একই অভিযোগ তুলেছে ‘সেভ ডেমোক্রেসি’ও। তদন্ত ঠিক পথে না এগোলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হবে বলেও জানিয়ে দিল ওই ফোরাম।
‘সেভ ডেমোক্রেসি’র তরফে রবিবার বিকেলে শ্রীরামপুরের তারাপুকুর গভর্নমেন্ট কলোনিতে রাজার বাড়িতে আসেন সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বিচারপতি তথা ফোরামের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, চঞ্চল চক্রবর্তী, ভারতী মুৎসুদ্দিরা। রাজার বাবা দোলন দাশগুপ্ত, মা রিঙ্কুদেবী এবং জ্যাঠামশাই সাধনবাবুর সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। বিকাশবাবুর অভিযোগ, রাজাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। রিঙ্কুদেবী তাঁদের বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের এনে পাশের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী নাগ এবং তাঁর স্বামী পিন্টুবাবু ছেলেকে মারধর করে। পরে বন্ধুরা ছেলেকে রাজ্যধরপুরে অন্য বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যায়। স্বামীকে নিয়ে আমি মাহেশে বাপেরবাড়িতে ছিলাম। সেখানে না নিয়ে গিয়ে কেন ছেলেকে রাজ্যধরপুরে নিয়ে যাওয়া হল?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘দেহের ময়নাতদন্ত থেকে দাহ— সব পিন্টুবাবু তৎপরতার সঙ্গে করিয়ে দেন। উনি কেন এত উদ্যোগী হলেন?’’
দশমীর ভোরে শ্রীরামপুরে রেললাইনের ধার থেকে রাজার দ্বিখণ্ডিত দেহ উদ্ধারের পরে রেল পুলিশে সাধনবাবু লিখিত ভাবে জানান, দুর্ঘটনায় ভাইপোর মৃত্যু হয়েছে। বিকাশবাবু জানতে চান, তিনি সজ্ঞানে তা লিখেছিলেন কিনা। সাধনাবাবু জানান, কাগজে কিছু একটা লেখা ছিল। সই করতে বলায় তিনি করে দেন। বিকাশবাবুরা পরামর্শ দেন, বিষয়টা তিনি যেন পুলিশকে জানান। বিকাশবাবুর অভিযোগ, প্রথম দিকে তদন্তে গাফিলতি হয়েছে। রাজার রক্তমাখা জামা উদ্ধারে অনেক দেরি করেছে। দেওয়ালে রক্তের ছিটে থাকলেও পরীক্ষা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস। পুলিশের জন্য ধৃত নেতা ছাড়া পেলে আবার গুন্ডামি করবেন।’’
ফোরামের অভিযোগ, রাজার বাড়ির কাছেই প্রতিবাদ সভার জন্য মাইক বাঁধা হলে পুলিশ খুলে নেয়। হ্যান্ডমাইক নিয়ে সভা হয়। অশোকবাবু বলেন, ‘‘শাসক দল ভয় পাচ্ছে।’’ পুলিশের দাবি, সভার অনুমতি না থাকায় মাইক খুলতে হয়।
এ দিনই বেলা ১২টা নাগাদ রাজার বাড়িতে আসেন স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রিঙ্কুদেবীদের নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দেন তিনি। কল্যাণ জানান, তিনি চন্দননগরের পুলিশ কমিশনারকে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ করতে বলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁকে ফোন করে বিষয়টি শোনেন এবং দলের রং না দেখে উপযুক্ত তদন্তের নির্দেশ দেন। কল্যাণ বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা নিশ্চয়ই উপযুক্ত তদন্ত করে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।’’ এর আগে রাজার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও। প্রয়োজনে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানোরও আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দ৯লনেতার কোনও কাজ নেই।’’