স্নেহে: মায়ের সঙ্গে রিজুয়ানা ফিরদৌসি। নিজস্ব চিত্র
ছোট বেলায় বাবা মারা যান। অভাবের সংসারে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল একটা সময়। তবে হার মানেনি রিজুয়ানা ফিরদৌসি। অভাবের সঙ্গে তীব্র লড়াই করা রিজুয়ানাই এবার হাই-মাদ্রাসায় হাওড়া জেলায় প্রথম হয়েছে। তার নম্বর ৭০৮।
বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেরানিতলায়। তবে বাগনানেন একটি মিশনে থেকেই পড়াশোনা করেছে রিজুয়ানা। পরীক্ষা দিয়েছে উলুবেড়িয়া হাই-মাদ্রাসা থেকে। শনিবার মার্কশিট নিতে মা সাজেদা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে বাগনানের ওই মিশনে এসেছিল সে। সাজেদা জানান, লিভারের রোগে যখন তাঁর স্বামী মারা যান, তখন রিজুয়ানা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। স্বামীর মৃত্যুতে তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়ে যান তিনি। কোনও রকমে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও, অভাবের জেরে বছর দুয়েকের মধ্যেই বড় মেয়ে রিজুয়ানার স্কুল ছাড়ার উপক্রম হয়। সাজেদা বলেন, ‘‘কয়েকটা দোকান ঘর ভাড়ার টাকায় কোনওরকমে সংসার চলে। ভেবেছিলাম মেয়েকে আর পড়াতে পারব না। সেই সময়ই এক প্রতিবেশির মুখে বাগনানের ওই মিশনের কথা শুনি। এখানেই মেয়েকে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিই।’’
তারপর থেকে মিশনেই পড়াশোনা করেছে রিজুয়ানা। মিশনের পরিবেশ ভাল ফল করতে অনেকটাই সাহায্য করেছে বলে জানায় সে। মার্কশিট হাতে পেয়ে কেঁদে ফেলে রিজুয়ানা। বলে, ‘‘বাবা এই রেজাল্ট দেখলে খুব খুশি হতেন।’’ ছোট থাকলেও বাবার অসুস্থতার কথা স্পষ্ট মনে আছে তার। আরও পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চায় রিজুয়ানা। তার কথায়, ‘‘বাবার চিকিৎসার জন্য মাকে হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে দেখেছি। আমি চাই চিকিৎসক হয়ে গরীব মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’’ রিজুয়ানার ফলে খুশি মিশন কতৃপক্ষও। ডিরেক্টর জনাব আলি জানান, রিজুয়ানার স্বপ্ন পূরণে সবরকম ভাবে সাহায্য করা হবে।