চল্লিশ বছর পরে খাল সংস্কার শুরু নোনাকুণ্ডুতে

সত্তর দশকের মাঝামাঝি শেষ বার ডোমজুড়ের নোনাকুণ্ডুতে খাল সংস্কার করেছিল তৎকালীন ডোমজুড় ব্লক ডেভলভমেন্ট কমিটি। তার পর বহু বার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ওই খাল সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার চাষি থেকে সাধারণ মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০১:০০
Share:

চলছে খাল সংস্কার। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

সত্তর দশকের মাঝামাঝি শেষ বার ডোমজুড়ের নোনাকুণ্ডুতে খাল সংস্কার করেছিল তৎকালীন ডোমজুড় ব্লক ডেভলভমেন্ট কমিটি। তার পর বহু বার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ওই খাল সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার চাষি থেকে সাধারণ মানুষ। অবশেষে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের কৃষি-সেচ বিভাগের হাওড়া ডিভিশের উদ্যোগে এবং ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সহযোগিতায় সেই খাল সংস্কার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে স্লুইস গেট।

Advertisement

ডোমজুড় ব্লকের অন্তর্গত উত্তর ঝাঁপড়দহ পঞ্চায়েতের নোনাকুণ্ডু গ্রামে ওই খালটি স্থানীয় ভাবে ‘আমড়াতলা হানা’ (ছোট খালকে স্থানীয় ভাবে হানা বলা হয়) নামে পরিচিত। খালটি গ্রামীণ হাওড়া ও হুগলির একাংশে বিস্তৃত রাজাপুর বা মেটিয়া সেচখালের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কৃষিপ্রধান এলাকা বলে পরিচিত উত্তর ঝাঁপড়দহ ও পার্বতীপুর পঞ্চায়েতের নোনাকুণ্ডু, পার্বতীপুর, মহিষগোট, মহিষনালা, চক নারনা-সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ওই খালের জল চাষের কাজে ব্যবহার করেন। কিন্তু সংস্কার না হওয়ায় চাষের জমিতে জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছিল। গ্রীষ্মকালে জল প্রায় মিলত না। আবার অতিবর্ষণে ভাসত জমি। ব্যাহত হতো চাষের কাজ।

নোনাকুণ্ডুর বাসিন্দা সুভাষ পাত্র, পার্বতীপুরের বাসিন্দা শেখ মহিনুদ্দিন, মহিষনালার ভোলানাথ পুরকাইতের দাবি, বাম আমলে খালটি সংস্কারের জন্য বহু বার ব্লক ও জেলা প্রশাসনে আবেদন জানানো হয়েছে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেও বিষয়টি ‌নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেক বার যাওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালে শেষ বার আমড়াতলা হানার সংস্কার হয়েছিল। আমি তখন ব্লক ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য ছিলাম। সংস্কারের পর প্রায় বছর পনেরো চাষের কাজে জল সরবরাহের সমস্যা ছিল না। আশা করব, এ বারেও সেই ধারা বজায় থাকবে।’’

Advertisement

জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের কৃষি-সেচ বিভাগের হাওড়া ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের গোড়ার দিকে তাদের দফতর প্রায় দেড় কিমি দীর্ঘ ওই খাল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। ফেব্রুয়ারি নাগাদ টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে, সে সময় খাল সংলগ্ন‌ চাষের জমিতে ধান ছিল। তাই কাজ শুরু করা যায়নি। চাষের কাজ শেষ হওয়ার পরে এপ্রিল মাস নাগাদ কাজ শুরু হয়। পুরো কাজটাই হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্য। খাল সংলগ্ন একটি ছোট স্লুইস গেট অকেজো অবস্থায় রয়েছে। সেটির পাশেই একটি নতুন গেট তৈরি করা হয়েছে।

পুরো প্রকল্পের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত বাস্তুকার সন্দীপ পাল বলেন, ‘‘পুরো প্রকল্পটির জন্য আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা। নতুন স্লুইস গেট তৈরির ফলে চাষিরা নিজেদের প্রয়োজনমতো জমিতে জল দিতে পারবেন। বৃষ্টির জল খালে ধরে রেখে গ্রীষ্মকালে ব্যবহার করা যাবে। আবার এলাকায় জল জমে গেলে স্লুইস গেট খুলে সেই জল বের করে দেওয়া যাবে।’’ তিনি জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকেই স্লুইস গেট ও খালের দেখভাল করতে হবে। এ জন্য আলাদা করে কোনও কর্মী রাখা হবে না। পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই খালের জল যে যে পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা ব্যবহার করেন সেই পঞ্চায়েতগু‌লিকে খাল দেখভালের জন্য অনুরোধ করা হবে। খালের জলে নোংরা ফেলা যাবে না। এ বিষয়ে চাষিদেরও সচেতন থাকতে হবে।’’

খাল সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি গ্রামবাসীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement