একের পর এক অভিযোগ নিয়ে চন্দননগরের বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে বুধবার ক্ষোভ উগরে দিয়ে এলেন চন্দননগরের ‘বিদ্রোহী’ তৃণমূল কাউন্সিলররা। সভাপতি অবশ্য পুরো বিষয়টি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ছেড়ে দিয়ে বিবদমান দু’পক্ষকেই আপাতত মুখে কুলুপ আঁটার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
পুরসভার কাজে তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযওগ তুলে শাসকদলের ১৬ জন প্রবীণ কাউন্সিলর সম্প্রতি চিঠি দিয়ে মেয়রের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার পর থেকেই চন্দননগর পুরসভায় শাসকদলের দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন অব্যাহত। এর জেরে বুধবার পুরসভায় বোর্ড-মিটিংও ভেস্তে যায়।
বুধবারই কলকাতার ভবানীপুরে সুব্রত বক্সীর বাড়িতে সঙ্গে দেখা করতে আসেন ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলররা। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, সেখানে তাঁরা সুব্রতবাবুর কাছে পুরসভায় অসম্মানের অভিযোগ তোলেন। পুরসভার উন্নয়নের কাজেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ওই কাউন্সিলররা পুরসভার পূর্ত বিভাগের কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তার মধ্যে রয়েছে চন্দননগর স্টেশন রোডে একটি বাণিজ্যিক নির্মাণকে অ-বাণিজ্যিক হিসেবে দেখানো। এক প্রবীণ কাউন্সিলরের অভিযোগ, ‘‘চন্দননগর স্টেশন রোডে একটি বাণিজ্যিক ভবনকে মানুষের ব্যবহারের জন্য পাঁচতলা ফ্ল্যাট হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে পুরসভা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা দায়িত্বে আছেন, ঘুরপথে তাঁরা পকেট ভারী করছেন।’’
সূত্রের খবর, অন্তত ১৪-১৫টি দুর্নীতির ফাইল দলীয় সভাপতির কাছে জমা দেন ওই কাউন্সিলররা। চন্দননগর পুরসভায় বর্তমানে পূর্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মুন্না অগ্রবাল। তিনি তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে গত পুর নির্বাচনে জয়ী হন। পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে পুরসভার পূর্ত বিভাগের দায়িত্বে আসেন। মুন্না অবশ্য প্রবীণ কাউন্সিলরদের আনা ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মেয়রের কোর্টে বল ঠেলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি পুরসভার নিকাশি নালার কাজ দেখি। অন্য কিছু নয়। মেয়র নিজে পূর্তের কাজ দেখেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন, অবান্তর।’’
চন্দননগর পুরসভার মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভায় উন্নয়ন কিছু হলে আমিই ভাল, আর বাকিরা কালো, এ সব অবান্তর কথা বলার লোক আমি নই। পুরসভার সর্বোচ্চ দায়িত্বে যখন রয়েছি, কিছুই অস্বীকার করছি না। ভুল বোঝাবুঝি একটা হয়েছে। শীঘ্রই মিটে যাবে।’’ বিদ্রোহীরা আরও জানান, পুরসভার জল বিভাগের কাজেও নানা অনিয়ম রয়েছে। তাঁরা সবটাই দলের সভাপতিকে জানিয়েছেন।
চলতি মাসের ৮ তারিখে কলকাতায় দলের কোর কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে কোনও রফাসূত্র বের হয় কিনা, এখন সেটাই দেখার।