দুর্বল: এই ফাটলের সংস্কার কবে, মেলেনি উত্তর।
পূর্ত দফতরের বোর্ড বলছে, ‘বিপজ্জনক সেতু’। রয়েছে নিষেধাজ্ঞাও, ‘অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ’। তবু দিনে-রাতে আরামবাগের দ্বারকেশ্বর নদের উপরে রামকৃষ্ণ সেতু দিয়ে ছুটে চলেছে অতিরিক্ত পণ্যবাহী লরি-ট্রাক।
বছর খানেক আগেই সেতুটিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করে পূর্ত দফতর। গত মে মাসের মাঝামাঝি মহকুমা পূর্ত দফতরের বিশেষজ্ঞরা একদফা সেতুর চাক্ষুষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে প্রশাসনকে জানিয়ে দেন, ‘ওভারলোডেড’ ট্রাক চলাচল বন্ধ করা না-হলে যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে কলকাতার সঙ্গে সংযোগের এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি। কিন্তু তার পরেও প্রতিদিনের ছবিটা পাল্টায়নি।
মহকুমা পূর্ত দফতরের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, এক শ্রেণির পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারের ‘মদতে’ রাতে তো বটেই, দিনেও যথেচ্ছ ‘ওভারলোডেড’ ট্রাক যাচ্ছে ওই সেতু দিয়ে। ওই দফতরের সহকারী বাস্তুকার (নির্মাণ) নিরঞ্জন ভড় বলেন, ‘‘যে নকশায় সেতুটি তৈরি হয়েছিল, তাতে যত গাড়ির ভার সেতুটি নিতে পারত, সে তুলনায় এখন গাড়ির সংখ্যা এবং ভার প্রতিদিন বাড়ছে। সম্প্রতি সেতুটি সংস্কার করা হলেও ‘ওভারলোডেড’ গাড়ি আটকাতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা হয়নি।’’
মহকুমা প্রশাসন থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক-লরি চলাচল রুখতে পুলিশ এবং মোটরযান দফতরকে কড়া পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাসের দাবি, “নিয়মিত ওই সেতুতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। অধিকাংশ ‘ওভারলোডেড’ গাড়ি বাঁকুড়া থেকে আসছে। বিষয়টা সেখানকার প্রশাসনিক স্তরে জানিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে। ওই সেতুতে অনিয়ম করে ওই সব ট্রাক চলতে দেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
সেতুটি এখন ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে?
যদিও এ নিয়ে এখনও কোনও উন্নত মানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। সাধারণ ভাবে সংস্কার করা হয় মাস আটেক আগে। কিন্তু পূর্ত দফতরের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, সেতুটির ভিতরের দিক প্রায় ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষজন আগেই ওই জায়গায় বিকল্প সেতু তৈরির দাবি তুলেছেন। প্রশাসনের কাছে একই সুপারিশ করেছে পূর্ত দফতরও। সেইমতো ইতিমধ্যে দু’দফা সমীক্ষাও হয়েছে। কিন্তু তার পরে আর কাজ এগোয়নি। জেলা পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণব বিশ্বাস জানান, চাক্ষুষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে সেতু নিয়ে পরিষ্কার কিছু বলা মুশকিল। তবে পুরনো সেতুটিতে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দফতর থেকেও কড়া ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেতুর দু’দিকে বোর্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় রাজ্য স্তরে বিশেষজ্ঞ দল নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি, পুজোর আগেই রামকৃষ্ণ সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো ওই সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলে। ৪০-৫০ টন করে বালি, চাল বা পাথর বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। তা ছাড়াও অন্য গাড়ির চাপও কম নয়। কারণ, আরামবাগ অনেকগুলি জেলার সংযোগস্থল। বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকেও যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচল করে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজারেরও বেশি গাড়ি চলে ওই সেতুতে।