তারস্বরে বাজছে ডিজে, জমে রয়েছে আবর্জনা

গড়চুমুকে প্রকাশ্যে মদ্যপান

মঙ্গলবার গড়চুমুকে গিয়ে দেখা যায়, বড়দিনের মত না হলেও এ দিনও অনেকে চড়ুইভাতি করতে এসেছেন এখানে। নানা জায়গায় তারস্বরে বাজছে ডিজে।

Advertisement

নুরুল আবসার

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১২
Share:

দাপটে: পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যেই চলছে মদ্যপান।

প্রকাশ্যে মদ্যপান, তারস্বরে ডিজে এবং যেখানে সেখানে রান্না করা— সব কিছুরই দেখা মিলল হাওড়ার শ্যামপুরের গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রে। মিলল না শুধু পরিষেবা। যদিও হাওড়া জেলার পুলিশ-প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে এ বার জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে মদ্যপান, ডিজে বাজানো বন্ধ থাকবে। চলবে পুলিশের নজরদারি। মঙ্গলবার গ়়ড়চুমুকে পুলিশ থাকলেও তাতে কাজের কাজ তেমন হল না বললেই চলে।

Advertisement

মঙ্গলবার গড়চুমুকে গিয়ে দেখা যায়, বড়দিনের মত না হলেও এ দিনও অনেকে চড়ুইভাতি করতে এসেছেন এখানে। নানা জায়গায় তারস্বরে বাজছে ডিজে। চলছে প্রকাশ্যে মদ্যপান। যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের গ্লাস। গোল হয়ে বসে বাহারি হুঁকো টানার দৃশ্যেও দেখা গিয়েছে। যেখানে খাওয়া দাওয়া চলছে তারই পাশে ফেলা হচ্ছে থার্মোকলের থালা-সহ নানা আবর্জনা। কুকুর, বেড়াল এসে সে সব এখানে ওখানে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও আবার আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে নদীর ধার। যদিও এই সব নিষিদ্ধ করে ছাপানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লাগানো রয়েছে পর্যটনকেন্দ্রের ভিতরে। সেখানে লেখা রয়েছে পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে বোটিং করা, যত্রতত্র নোংরা ফেলা, ডিজে বাজানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বোটিং অবশ্য হচ্ছে না। বাকি সব কিছুই হচ্ছে।

নিয়মের তোয়াক্কা না করে আনা হয়েছে ডিজে বক্স।

Advertisement

হাওড়া জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম শ্যামপুরের গড়চুমুক। শীত পড়তে না পড়তেই এই সব জায়গায় জেলা ও তার বাইরে থেকে দলে দলে মানুষ চড়ুইভাতি করতে আসেন। গঙ্গা এবং দামোদরের সঙ্গমস্থল আটান্ন গেটের কাছে এই চড়ুইভাতির জায়গাটির মালিক জেলা পরিষদ। তারা এখানে রাস্তা তৈরি করেছে। লাগানো হয়েছে প্রচুর গাছ। কিন্তু অন্য কোনও পরিষেবা মেলে না বললেই চলে। সারা পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গিয়েছে, গোটা দুয়েক প্লাস্টিকের ড্রাম ও কয়েকটি গর্ত ছাড়া আবর্জনা ফেলার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। নদীতে নোংরা ফেলায় দূষিত হচ্ছে জল। পুরো এলাকায় মাত্র তিনটি নলকূপ রয়েছে। তাতে প্রয়োজন মেটে না। রান্নার শেড আছে মাত্র চারটি। জেলা পরিষদ থেকে নিয়োগ করা কয়েকজন মহিলা ঝাঁটা দিয়ে থার্মোকলের থালা সরিয়ে দিচ্ছেন বটে তাতে কাজ তেমন কিছু হচ্ছে না। কারণ এ দিক ও দিক ডাঁই করে রাখা থার্মোকলের থালা গুটিকয় মহিলার পক্ষে সাফাই করা বাস্তবে সম্ভব নয় বললেই চলে।

এই জায়গাটির ঠিক উল্টোদিকে রয়েছে মৃগদাব। এটিও চালায় জেলা পরিষদ। এখানে বন দফতরের একটি মিনি চিড়িয়াখানা আছে। হরিণ, ,সজারু, কুমির, ময়ূর এবং নানা প্রজাতির পাখি রয়েছে এখানে। মৃগদাব সংলগ্ন খোলা মাঠেও চলছে চড়ুইভাতি। সেখানে ভ্যাট থাকলেও অনেকে মাঠেই থার্মোকলের থালা ফেলছেন। সেগুলি হরিণ প্রকল্প সংলগ্ন জমিতে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছেন জেলা পরিষদের কর্মীরা। ফলে বিপুল পরিমাণ ধোঁয়া সরাসরি ঢুকছে হরিণ প্রকল্পের মধ্যেই। হরিণগুলি ভয়ে ছোটাছুটি করছে।

হুগলির তারকেশ্বরের বাসিন্দা রাহুল সিংহ নিজের টিউটোরিয়াল হোমের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সোমবার চ়ড়ুইভাতি করতে এসেছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘জায়গাটি এমনিতে খুবই ভালো। ১৭০ টাকা পার্কিং ফিজ দিয়েছি। কিন্তু পরিষেবা বলে কিছুই নেই। বেশ হতাশ লাগছে।’’ চড়ুইভাতি করতে আসা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ভ্যাট না থাকার জন্যই এ দিক ও দিক আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে। রান্না করার পর্যাপ্ত শেড নেই। তাই যেখানে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই রান্না করা হচ্ছে।

পুলিশের দাবি, ডিজে যাতে বাজানো না হয় তার জন্য টহলদারি চলছে। কয়েকজন পুলিশকর্মীকে ডিজে চালানো বন্ধ করে দিতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু পুলিশ চলে যেতেই ফের সেই সব ডিজে বাজতে শুরু করেছে। হাওড়া জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য এবং উলুবেড়িয়া দক্ষিণকেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় জানান, গড়চুমুকের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে মানুষ সচেতন না হলে কিছুতেই কাজ হবে না।

মঙ্গলবার গড়চুমুকে ছবি দু’টি তুলেছেন সুব্রত জানা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement