তারকেশ্বর: পরিচালন সমিতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে সেই কবেই! কিন্তু তারকেশ্বরের পাঁচটি কৃষি সমবায় সমিতির নির্বাচন কবে হবে, উত্তর জানা নেই কারও। না প্রশাসনের, না শাসকদলের। আর এর জেরে ভুগতে হচ্ছে চাষিদের। কিছু ক্ষেত্রে ঋণ পেতে তাঁদের ভুগতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিচালন সমিতি না-থাকায় সমবায়গুলিতে দীর্ঘমেয়াদি কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সদস্যেরাই।
কেন এই অবস্থা?
ওই পাঁচ কৃষি সমবায়ের (মহেশপুর, সন্তোষপুর, আসতারা, ভঞ্জিপুর এবং গোবরহারা) সদস্যদের একাংশ তো বটেই, জেলা তৃণমূল নেতাদের অনেকেও মানছেন, তারকেশ্বরে দলের দুই নেতা স্বপন সামন্ত (পুরপ্রধান) এবং উত্তম কুণ্ডুর (উপ-পুরপ্রধান) আকচা-আকচি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রার্থীই ঠিক করা যাচ্ছে না। দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে গোলমাল লেগেই রয়েছে। এই অবস্থায় ওই পাঁচ সমবায়ে প্রার্থী ঠিক করতে গেলে ফের অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা সমবায় দফতরের কর্তারা অবশ্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁদের দাবি, প্রশাসনের কাছে চেয়েও নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ বাহিনী মিলছে না। সেই কারণেই নির্বাচন করা যাচ্ছে না। জেলা পুলিশের এক কর্তার পাল্টা দাবি, পাঁচ সমবায়ে নির্বাচনের জন্য পুলিশ চেয়ে কেউ আবেদন করেননি। জেলায় আইন-শৃঙ্খলাজনিত অন্য কোনও সমস্যা না থাকলে সহযোগিতা করা হবে।
ওই পাঁচ সমবায়ের পরিচালন সমিতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে ২০১৫ সালের শেষাশেষি। পাঁচটিতেই ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। বর্তমানে সেগুলি পরিচালনার জন্য প্রশাসক রয়েছেন। প্রতিটি সমবায়ের সদস্যসংখ্যা গড়ে এক হাজারেরও বেশি। কৃষিপ্রধান তারকেশ্বরে চাষের জন্য ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে চাষিরা পুরোপুরি সমবায়ের উপরেই নির্ভর করেন। কিন্তু প্রশাসকদের কাছে সমিতিতে কোনও নতুন সদস্য হওয়া বা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কারণ, বিধিবদ্ধ পরিষেবা বাদে যে সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন রয়েছে, সে ক্ষেত্রে প্রশাসকের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মানছেন সমবায়ের কর্তারাই।
অতঃকিম?
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই পাঁচ সমবায়ে যাতে দ্রুত নির্বাচন হয়, সেই চেষ্টা চলছে। এতদিন নির্বাচন না-হওয়ার জন্য প্রশাসনকেই দুষছেন তারকেশ্বরে শাসকদলের যুযুধান দুই নেতা— স্বপনবাবু এবং উত্তমবাবু। নিজেদের মধ্যে আকচা-আকচির কথা তাঁরা মানেননি। তবে, জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘তারকেশ্বরের মতো সিঙ্গুরের দু’টি সমবায়েও একই সমস্যা রয়েছে। চাষিদের স্বার্থ এ ভাবে ক্ষুণ্ণ হতে দেবে না দল। ওই সব সমবায়ে যাতে দ্রুত নির্বাচন করা যায়, সেই লক্ষ্যেই আগামী রবিবার সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসব।’’