সমস্যা মিটল না জয়শ্রী টেক্সটাইলসে

রাতভর বৈঠকের পর ৯ জন শ্রমিককে বাদ দিয়ে শুক্রবার থেকেই কারখানা চালু করতে রাজি হয়েছিলেন রিষড়ার জয়শ্রী টেক্সটাইলস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকেরা বেঁকে বসায় ওই কারখানায় অচলাবস্থা কাটল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রিষড়া শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ১৩:১৫
Share:

বিক্ষোভ: শুক্রবারও উত্তেজনা ছিল কারখানা চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

রাতভর বৈঠকের পর ৯ জন শ্রমিককে বাদ দিয়ে শুক্রবার থেকেই কারখানা চালু করতে রাজি হয়েছিলেন রিষড়ার জয়শ্রী টেক্সটাইলস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকেরা বেঁকে বসায় ওই কারখানায় অচলাবস্থা কাটল না। সকলকে কাজে নেওয়ার দাবিতে তাঁরা অনড় থাকেন। এই পরিস্থিতিতে আগামী সোমবার মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের।

Advertisement

দৈনিক ৬ টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ওই কারখানায় মঙ্গলবার থেকে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার রীতিমতো অশান্তি হয়। রেললাইনের পাথর নিয়ে শ্রমিক-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, নিরাপত্তারক্ষীদের ঘর ভাঙচুর, শূন্যে গুলি— কিছুই বাদ থাকেনি। কারখানার এক ম্যানেজারের মাথা ফাটে। গোলমালের জেরে ২৪ জন শ্রমিককে সাসপেন্ড করা হয়।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কারখানার পরিস্থিতি জেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসে‌ন শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক রজত নন্দা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অতুল ভেঙ্কট-সহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। কারখানার তরফে ছিলেন অন্যতম দুই শীর্ষকর্তা মনমোহন সিংহ এবং রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোরে আসেন কারখানার সিইও সাত্যকি ঘোষ।

Advertisement

শুক্রবার ভোর সওয়া পাঁচটা পর্যন্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সাসপেন্ড হওয়া ২৪ জন শ্রমিকের মধ্যে ১৫ জন ক্ষমা চেয়ে চিঠি দিলে কাজে ফেরানো হবে। বাকি ন’জনের সাসপেনশন এখনই উঠবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চ‌লবে। শ্রমিকদের মজুরি এবং কাজ বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করবেন কর্তৃপক্ষ। কারখানার এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই ৯ জন শ্রমিক গুরুতর অন্যায় করেছেন। কোনও পরিস্থিতিতেই তদন্ত না-করে ওঁদের কাজে ফেরানো হবে না।’’

কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানেননি সাধারণ শ্রমিকেরা। আইসি নন্দদুলাল ঘোষের মোবাইলে ফোন করে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানান। তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। শ্রমিকদের অভিযোগ, তুচ্ছ কারণে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কর্তৃপক্ষের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এর আগেও সামান্য কারণে দুই শ্রমিককে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁদের কাজে ফেরানোর আশ্বাস দিলেও তা হয়নি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সমঝোতা করছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়। এক শ্রমিক বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করাতেই সমস্যা হয়েছে। তাই, সবাইকে কাজে না নিলে আমরা ঢুকব না।’’

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যে চুক্তি রয়েছে, সেই মোতাবেক বছরের জুলাই মাসে দৈনিক ১৭ টাকা মজুরি বাড়ানোর কথা অবশ্যই মানা হবে। কিন্তু শ্রমিকরা যে বাড়তি ৬ টাকার কথা বলছেন, সেটা চুক্তিতে নেই। সেই টাকার জন্য শ্রমিকদের কাজের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কিন্তু এটা তাঁরা করতে রাজি নন। পক্ষান্তরে, শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, চুক্তিতে না-থাকলেও বার্ষিক ‘ইনক্রিমেন্ট’ হিসেবে জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিদিন ৬ টাকা করে মজুরি বাড়ার কথা ছিল। তা মানা হচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement