জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে আলুগাছ । -নিজস্ব চিত্র।
হঠাৎই দু’দিনের বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির জেরে আমতার বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলু, টোম্যাটো সহ বিভিন্ন ধরনের সব্জিচাষ কার্যত জলের তলায় চলে যায়। জল শুকোলেও আলু-সহ সবজিতে পচন ধরে গিয়েছে বলে চাষিরা জানিয়ছেন। এই অবস্থায় কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের।
গত বছর পুজোর আগে বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে হাওড়া জেলার গ্রামীণ এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। আমতা, জয়পুর এলাকার ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন চাষিরা। সেই ক্ষতি কিছুটা সামাল দিতে আমতার মান্দারিয়া, চকপোতা, সন্তোষনগর, সোমেশ্বর, মিল্কিচক, খোসালপুর সহ ১০-১২টা গ্রামের চাষিরা আলু, টোম্যাটো, উচ্ছে, ঝিঙে, পটল, শশা সহ বিভিন্ন সব্জি চাষ করেন।
কিন্তু গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দফায় দফায় বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি সেই সম্ভাবনায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে বলে চাষিদের মত। চাষিরা জানান, বৃষ্টির ফলে জমিতে কোথাও এক ফুট কোথাও ইঞ্চি ছয়েক জল দাঁড়িয়ে যায়। অনেকে পাম্প করে জমির জল বাইরে তুলে ফলে দিলেও জমিতে কাদা রয়েছে। পাশপাশি অনেক জমিতে এখন জল দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতে বহু চাষি পচনের হাত থেকে বাঁচাতে জমির সব আলু তুলে নেন। কিন্তু ওই আলু বস্তাবন্দি করে হিমঘরে পাঠানোর আগেই তাতে পচন লেগে যাচ্ছে বলে চাষিরা জানান। অনেকে আবার আলু তুলতে গিয়ে দেখছেন মাটির ভিতরেই আলু পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে আবার টাকা খরচ করে আলু তুলতে চাইছেন না বহু চাষি। একই অবস্থা টোম্যাটো, উচ্ছে, ঝিঙে, পটলেরও। সবজির জমি জলে ডুবে থাকায় গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। তার উপর শিলাবৃষ্টিতে গাছের ডগা ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে ফলনের আর আশা দেখছেন না চাষিরা।
শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট টোম্যাটো।
আমতা ১-এর বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে চাষিদের সমস্যার কথা শুনেছি। কৃষি দফতরকে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি শুকদেব মণ্ডল বলেন, ‘‘চাষিদের সঙ্গে কথা বলব। দরকারে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মান্দারিয়ার বটু পোল্লে দু’বিঘা জমিতে আলু ও এক বিঘায় সব্জি চাষ করেছিলেন, এখন পথে বসার অবস্থা। বটুবাবু বলেন, ‘‘লাখ খানেক টাকা খরচ করে আলু ও সব্জি চাষ করেছি। ধার দেনাও রয়েছে। ভেবেছিলাম ফসল উঠলে পাওনাদারদের দেনা শোধ করব। কিন্তু যা অবস্থা হল তাতে খাব কি আর দেনা শোধ হবেই বা কী করে! এলাকারই চাষি সমীর মালিক, শম্ভু মালিক, গোবিন্দ সাঁতরা, বাদল সাঁতরা, অসিত খাঁড়া আলু ও সব্জি চাষ করেছিলেন। সকলেরই একই অবস্থা। গোবিন্দ সাঁতরা, অসিত খাঁড়া বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য না পেলে পরিবার নিয়ে পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।’’