হাসপাতালে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
বছর পাঁচেক হল তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের হাতে পুলিশ যে মাঝেমধ্যে আক্রান্ত হয়, তা-ও তিনি জানেন। কিন্তু পুলিশকে গালিগালাজ করার ‘প্রতিবাদ’ করায় তাঁকে যে এ ভাবে মার খেতে হবে, তা যেন তিনি ভাবতেই পারছেন না! সোমবার হাওড়ার একটি সুপার স্পেশ্যালিটি বেসরকারি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এক সময়ে মনে হচ্ছিল, আমাকে ওরা মেরেই ফেলবে। ওরা আমার বুকে একের পর এক ঘুষি মেরে যাচ্ছিল। দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। বমি পাচ্ছিল। ওই সময়ে আমার চিৎকার শুনে সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের এক জন এএসআই বাসটাকে না থামালে আমি হয়তো বাঁচতামই না।’’
শনিবার রাত আটটা নাগাদ কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে সাঁতরাগাছি ট্র্যাফিক গার্ড অফিসে যাওয়ার জন্য ধূলাগড়মুখী একটি বাসে উঠেছিলেন পুলিশকর্মী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সেই বাসেই কয়েক জন যুবকের হাতে আক্রান্ত হন তিনি। অভিযোগ, চলন্ত বাসের মধ্যেই বাসের মেঝেতে ফেলে ঘুষি-লাথি মারা হয় তাঁকে। মার খেয়ে বাসের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রবীন্দ্রনাথবাবু। ওই সময়ে বাসের সহযাত্রীদের কাছে তিনি হাত জোড় করে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। এমনকী, বাসও থামাননি চালক। ঘটনার পরে দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন ওই বাসের চালক ও কন্ডাক্টরকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, আক্রমণকারীরা সকলেই মত্ত ছিল।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পনেরো আগে রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর সদর দফতর ব্যারাকপুর থেকে ডেপুটেশনে হাওড়ায় ট্র্যাফিক পুলিশের কাজে যোগ দেন বছর তিরিশের রবীন্দ্রনাথবাবু। ডিউটি পড়েছিল কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সাঁতরাগাছি ট্র্যাফিক গার্ডে। কিন্তু শনিবারের ঘটনার পরে আতঙ্কিত ওই পুলিশকর্মী এখন চাইছেন, তাঁকে অবিলম্বে সদর দফতর ব্যারাকপুরে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘আমার ব্যাচের সকলেই ডেপুটেশনে এসে আট দিন কাজ করার পরে সদর দফতরে ফিরে গিয়েছেন। আমাকে কেন ফেরানো হল না, বুঝতে পারছি না।’’
কেন এ ভাবে মারা হল তাঁকে? এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘ওই যুবকেরা বিনা কারণে আমার দিকে তাকিয়ে গালিগালাজ করছে দেখে আমি প্রতিবাদ করি। বলি, এ সব কথা বললে ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এর পরেই ওদের দু’জন এসে আমাকে ধাক্কা দেয়। আমিও পাল্টা ধাক্কা দিই। এর পরে ওরা আমাকে মারতে মারতে বলতে থাকে, দেখি কোন বাবা তোকে বাঁচায়।’’
রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, মূলত দু’জন মিলে তাঁকে মেরেছে। দলে যে আরও তিন-চার জন ছিল, তারা শুধু মারধরে উৎসাহ দিচ্ছিল। এ দিন তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘আমাকে ওই ভাবে মার খেতে দেখেও বাসযাত্রীরা কেউ এগিয়ে এলেন না কেন, সেটাই বুঝতে পারলাম না। এই শহরের মানুষ যে এতটা নির্দয় ও বেপরোয়া হতে পারে, সেটা জানা ছিল না।’’
আদতে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ওই রবীন্দ্রনাথবাবুর বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও আড়াই বছরের ছেলে। আতঙ্ক যে এখনও তাঁর পিছু ছাড়েনি, ওই যুবকের কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘আমার একটাই প্রার্থনা, হাওড়ার ট্র্যাফিক পুলিশ থেকে আমাকে যেন এখনই সদর ব্যারাকপুরে বদলি করে দেওয়া হয়।’’