জমি-বিবাদে ব্যান্ডেলের নেতা খুন, দাবি পুলিশের

শুক্রবার রাতে যে তিন জনকে ধরা হয়, তাদের মধ্যে মহম্মদ নাসিম ওরফে গুড্ডু টিটাগড় স্টেশন রোডের বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

পাকড়াও: খুনের অভিযোগে গ্রেফতার অস্ত্র-সহ দুষ্কৃতী। —নিজস্ব চিত্র

দু’মাস আগে ব্যান্ডেল স্টেশনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম। সেই ঘটনায় শুক্রবার রাতে আরও তিন জনকে গ্রেফতারের পরে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের দাবি, জমি-বিবাদে ওই খুন। এ জন্য ‘সুপারি কিলার’ ভাড়া করা হয়েছিল। দু’-তিন মাস ধরে খুনের ছক কষা হয়। গোটা ঘটনার মূল চক্রী ব্যান্ডেলের মানসপুর বস্তির বাসিন্দা শকুন্তলা যাদব ওরফে সমুদ্রি নামে বছর ষাটেকের এক মহিলা। ওই মহিলা-সহ আরও কয়েকজনের খোঁজ চলছে।

Advertisement

শুক্রবার রাতে যে তিন জনকে ধরা হয়, তাদের মধ্যে মহম্মদ নাসিম ওরফে গুড্ডু টিটাগড় স্টেশন রোডের বাসিন্দা। বৈজনাথ রায় ওরফে হেডেকের বাড়ি বাঁশবেড়িয়ার কলবাজারে এবং মঙ্গল যাদব (শকুন্তলার ছেলে) থাকে ব্যান্ডেলের মানসপুর বস্তিতে। ধৃতদের কাছ থেকে দু’টি ওয়ান শটার, চারটি গুলি, একটি সেভেন এমএম পিস্তল এবং তার সাতটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তিন জনকেই শনিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ১২ দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই নিয়ে ওই খুনের ঘটনায় পাঁচ জন ধরা পড়ল।

কোন জমি নিয়ে বিবাদ?

Advertisement

কমিশনারেট সূত্রের দাবি, ব্যান্ডেল মোড়ে শকুন্তলার একটি লজ রয়েছে। তার পাশে বেশ কয়েক কাঠা ফাঁকা একটি জমি সে কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু দিলীপের মধ্যস্থতায় অন্য এক জন জমিটি কেনেন। জমিটির বাজারদর এক কোটি টাকার উপরে। ‘সাধের’ জমি হাতছাড়া হওয়ায় দিলীপের উপরে খড়্গহস্ত হয় শকুন্তলা।

ধৃতদের পাশে রেখেই শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর। তিনি জানান, ওই জমি নিয়ে শকুন্তলা ও দিলীপের গোলমাল হয় গত নভেম্বর মাসে। তার জেরেই শকুন্তলার ষড়যন্ত্রে দিলীপ খুন হন। ধৃতেরাও সেখানে অপরাধের কথা সেখানে কবুল করে। পুলিশ কমিশনারের দাবি, ‘‘শকুন্তলা ৩ লক্ষ টাকায় গুড্ডু-সহ তিন সুপারি কিলার ভাড়া করে। দেড় লক্ষ টাকা অগ্রিম দেয়। স্থানীয় কয়েক জনকেও কাজে লাগায়। তাদের মধ্যেই এক জন হেডেক। সে শকুন্তলার লজের কর্মী। কে দিলীপ, কোন পথে তিনি যাতায়াত করেন, ‘অপারেশন’ সেরে কোন পথ দিয়ে পালাতে হবে— সবই হেডেক ভাড়াটে খুনিদের দেখিয়ে দেয়।’’

তদন্তকারীরা জানান, গত ২৯ জুন সকালে দিলীপ বাড়ি থেকে বেরোতেই হেডেক ফোনে গুড্ডুদের জানিয়ে দেয়। দিলীপ ট্রেন ধরতে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওঠার মুখেই গুড্ডু তাঁর মাথায় গুলি করে। তার আশপাশে আরও কয়েক জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী ছিল, যাতে কেউ বাধা দিলে মোকাবিলা করতে পারে। কেউ যাতে বাধা দেওয়ার সাহস না-পায়, সে জন্য তারা শূন্যে একটি গুলি ছোড়ে। তার পরে ব্যান্ডেল ফাঁড়ির কাছে রেললাইন থেকে নেমে বাইকে চেপে গা-ঢাকা দেয়। পুলিশের দাবি, পাইপগান থেকে ৩.১৫ বোরের গুলি ছোড়া হয় দিলীপকে। গুলির খোলটি উদ্ধার হয়েছে।

খুনের পরে দিলীপের স্ত্রী, ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রিতু সিংহ ব্যান্ডেল জিআরপি-তে অর্জুন সিংহ, বিজু পাসোয়ান এবং সঞ্জয় মিশ্র নামে তিন জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। সঞ্জয়কে গ্রেফতার করা হয়। অর্জুন আত্মসমর্পণ করে। রিতুদেবী গোড়া থেকেই দাবি করেন, দিলীপের জন্য এলাকায় ‘দাদাগিরি’ করতে না পেরে পরিকল্পনা করে তাঁকে খুন করে বিজেপি কর্মী বিজুরা। বিজেপি দাবি করেছিল, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন।

শনিবার রিতু বলেন, ‘‘সমুদ্রি অন্যের জমি কব্জা করতে চাইত। লজের পাশের জমি হাতাতে মালিককে হুমকি দিচ্ছিল। তাই স্বামী বাধা দিয়েছিল। তাই ওরা একজোট হয়ে স্বামীকে খুন করিয়েছে। ওদের চরম শাস্তি চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement