গ্রামে হ্যান্ডবিল, সমবায়ের ভাঁড়ার প্রায় ফাঁকা

মাত্র ৭২ হাজার টাকা জমা পড়েছে বুধবার। আর তোলা হয়েছে ৮ লক্ষ! বৃহস্পতিবারের ছবিটা আরও করুণ। জমা পড়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তোলা হয়েছে ৬ লক্ষ! অথচ, দু’দিন আগে পর্যন্ত হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের ‘পোলগুস্তিয়া সমবায় প্রাথমিক ঋণদান সমিতি’তে গড়ে টাকা জমা পড়ত ৮ লক্ষ করে। তোলা হতো গড়ে ৪ লক্ষ করে। তা হলে হঠাৎ এই পরিবর্তন? কেন সমিতির ভাঁড়ার প্রায় ফাঁকা?

Advertisement

নুরুল আবসার

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০১:২৯
Share:

এই লিফলেট ঘিরে আতঙ্ক এলাকায়। ছবি: সুব্রত জানা।

মাত্র ৭২ হাজার টাকা জমা পড়েছে বুধবার। আর তোলা হয়েছে ৮ লক্ষ!

Advertisement

বৃহস্পতিবারের ছবিটা আরও করুণ। জমা পড়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তোলা হয়েছে ৬ লক্ষ!

অথচ, দু’দিন আগে পর্যন্ত হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের ‘পোলগুস্তিয়া সমবায় প্রাথমিক ঋণদান সমিতি’তে গড়ে টাকা জমা পড়ত ৮ লক্ষ করে। তোলা হতো গড়ে ৪ লক্ষ করে। তা হলে হঠাৎ এই পরিবর্তন? কেন সমিতির ভাঁড়ার প্রায় ফাঁকা?

Advertisement

সৌজন্যে— একটি হ্যান্ডবিল। যা দেখে আতঙ্কিত সমিতির গ্রাহকদের মধ্যে টাকা তোলার হিড়িক পড়েছে। বুধবার সকাল থেকে ওই হ্যান্ডবিলে ছেয়েছে পোলগুস্তিয়া পঞ্চায়েত এলাকা। যাতে লেখা— ‘সমবায় সমিতির মাথারা গ্রাহকদের আমানতের টাকা সরিয়ে ফেলবে। পরে তা ডাকাতি হয়ে গিয়েছে বলে প্রচার করবে। ফলে, যাঁদের আমানত আছে, তাঁরা টাকা তুলে নিন’। হ্যান্ডবিলের ছবি দিয়ে পোস্টার তৈরি করে সেগুলি সাঁটানো হয় সমিতির দেওয়ালেও।

কে বা কারা ওই হ্যান্ডবিল ছড়াল? সমিতির কর্তারা তো বটেই, অন্ধকারে পুলিশও। সমিতির সম্পাদক তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘‘এটা তো পুরোপুরি গুজব। কারা ওই হ্যান্ডবিল ছড়াল বলতে পারব না। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আমরা পরিচালকমণ্ডলীর জরুরি বৈঠক ডেকেছি। ঠিক হয়েছে এলাকায় মাইকে প্রচার করে গ্রাহকদের সচেতন করা হবে। কারও টাকা মার যাবে না। সকলের টাকা সুরক্ষিত থাকবে।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে।

তবু, এ সব কথায় কর্ণপাত করছেন না গ্রাহকেরা। ওই সমিতিতে ১০ হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বাৎসরিক লেনদেন প্রায় ১১ কোটি টাকা। সমিতিটি একটি লাভজনক সংস্থা বলে দাবি করে পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যেরা জানান, প্রতিদিনের লেনদেনের জন্য ভাঁড়ারে নগদ প্রায় ৮ লক্ষ টাকা রাখা হয়। দু’দিন ধরে সেই টাকাই দ্রুত উঠে যাচ্ছে। গ্রাহকদের টাকা তুলে না নেওয়ার কথা বুঝিয়েও লাভ হচ্ছে না। দু’দিনই সন্ধ্যা পর্যন্ত সমিতির কার্যালয় খোলা থাকে শুধুই গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। সেই কাজ করতে সমিতির কর্মীরা হিমসিম খেয়ে যান। বৃহস্পতিবার বিকেলেই পুলিশ সমিতিতে আসে।

সমবায়ের পরিচালন সমিতির সদস্যেরাও মনে করছেন, সমিতির ক্ষতি করার জন্য কোনও স্বার্থান্বেষী মহল স্রেফ গুজব ছড়াতে হ্যান্ডবিলটি ছড়িয়েছে। তাতে প্রচারক হিসাবে কারও নাম নেই। শুধু ‘পরিবর্তনপন্থী’ হিসেবে তাতে একটি গোষ্ঠীর নাম দেওয়া আছে।

কেন গ্রাহকেরা টাকা তুলে নিচ্ছেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাহক জানান, এর আগে দু’বার এই সমিতিতে ডাকাতি হয়। আরও একবার ডাকাতির চেষ্টা হয়। সেই কারণেই তাঁরা হ্যান্ডবিলটি বিশ্বাস করেছেন। ইব্রাহিম অবশ্য জানিয়েছেন সমিতির সব টাকা বিমা করা আছে। ডাকাতিতে গ্রাহকদের কোনও ক্ষতি হয়নি। তাঁরা যথানিয়মে টাকা ফেরত পেয়েছেন। এ বারেও গ্রাহকদের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এলাকায় মাইকে প্রচার করে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের কাছে আবেদন করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement