শ্রীরামপুর আদালত

কল অকেজো, নেই শৌচাগার, নাকাল মানুষ

একে তো প্রবল গরম, তার উপরে পানীয় জলের তিনটি কলই অকেজো। ফলে, কয়েক মাস ধরে শ্রীরামপুর আদালতে ঢুকে প্রাণ ওষ্ঠাগত হচ্ছে বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবীদের। জলের জন্য তাঁরা আশপাশের দোকানের শরণাপন্ন হচ্ছেন। অনেকে আবার রাস্তার কলের সামনে দাঁড়াচ্ছেন। অবশ্য শুধু বিচারপ্রার্থীরাই নন, আদালত চত্বরে ছড়িয়ে থাকা পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আসা লোকজনকেও একই হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০১:১১
Share:

আদালত চত্বরে বিকল নলকূপ। —নিজস্ব চিত্র।

একে তো প্রবল গরম, তার উপরে পানীয় জলের তিনটি কলই অকেজো।

Advertisement

ফলে, কয়েক মাস ধরে শ্রীরামপুর আদালতে ঢুকে প্রাণ ওষ্ঠাগত হচ্ছে বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবীদের। জলের জন্য তাঁরা আশপাশের দোকানের শরণাপন্ন হচ্ছেন। অনেকে আবার রাস্তার কলের সামনে দাঁড়াচ্ছেন। অবশ্য শুধু বিচারপ্রার্থীরাই নন, আদালত চত্বরে ছড়িয়ে থাকা পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আসা লোকজনকেও একই হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে শৌচাগার না থাকাতেও।

শ্রীরামপুর আদালতের সঙ্গে একই চৌহদ্দিতে রয়েছে মহকুমাশাসকের দফতর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, জেলার সহকারী পরিবহণ অধিকর্তার অফিস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল)-এর অফিস। ঐতিহাসিক শহরের নিদর্শন হিসেবেও জায়গাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনেমারদের উপনিবেশের সময় এটাই ছিল ‘গভর্নমেন্ট কমপাউন্ড’। ওই সময় থেকেই এই মহকুমা-শহরের প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানো হয় এখান থেকেই। ফলে, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন। তবে এখন আদালতে কর্মবিরতি চলায় বিচারপ্রার্থীর সংখ্যা কম। কিছু দিন আগেই ডেনমার্কের জাতীয় মিউজিয়ামের টাকায় জীর্ণ ‘গভর্নমেন্ট হাউস’ সংস্কার করা হয়েছে। আদালতে প্রবেশপথ সংস্কারের তো়ড়জো়ড় চলছে। ওই তল্লাটের সৌন্দর্যায়ন নিয়েও নানা পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisement

সেই চত্বরেই অবশ্য পানীয় জলের সঙ্কট চলছে কয়েক মাস ধরে। চত্বরে চারটি নলকূপ রয়েছে। তার মধ্যে ৩টিই বিকল। অন্যটিতে ভাল ভাবে জল পড়ে না। তা ছাড়া, নলকূপটি এমন জায়গায় যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে খুঁজে পাওয়া কঠিন। জাঙ্গিপাড়া, চণ্ডীতলা, ডানকুনি-সহ দূরবর্তী অনেক জায়গা থেকে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে বিচারের কাজে শ্রীরামপুর আদালতে আসতে হয়। কিন্তু শৌচাগার না থাকায় তাঁরা সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে মুশকিলে পড়েন মহিলারা। বহু ক্ষেত্রেই কাজ সারতে তাঁদের সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে যায়।

সূত্রের খবর, আদালতের তরফে সংশ্লিষ্ট দফতরে জলের কল সংস্কারের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীদেরও অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আদালতের মুহুরিদের সংগঠনের দাবি, শৌচাগারের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে বহুবার আবেদন করা হয়েছে। কোনও অনুষ্ঠানে হাইকোর্টের বিচারপতি এলে তাঁদেরও বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ওই সংগঠনের দাবি, বছর কয়েক আগে তারা একটি শৌচাগার তৈরি করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুমতি না থাকার যুক্তি দেখিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইনজীবী দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বোতলে জল আনি।। কিন্তু এই গরমে তা শেষ হতে কত ক্ষণ! নলকূপ সারানোর জন্য কত বার বলেছি। কিন্তু কাজ হয়নি।’’ আর এক আইনজীবী রঞ্জন সরকারের কথায়, ‘‘শ্রীরামপুরের মতো জায়গায় আদালত চত্বরে জল থাকবে না, ভাবা যায়! অথচ এটাই বাস্তব।’’ জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা কার্তিক বসু প্রায়ই নানা কাজে আদালতে আসেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পিপাসা পেলে রাস্তায় যেতে হয়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হলেও তাই। এত টাকা খরচ করে ঝাঁ-চকচকে ভবন হয়েছে, অথচ শৌচাগার বা খাবার জলের সুবন্দোবস্ত নেই, ভাবতেই অদ্ভুত লাগে।’’ ওই এলাকারই প্রসাদপুর গ্রামের বাসিন্দা শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায়ই আদালতে আসতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আদালতে আসতে ভয় লাগে। বেশ কয়েক ঘণ্টা থাকতে হয়। কিন্তু শৌচাগার না থাকায় প্রাণান্তকর অবস্থা হয়। মেয়েদের পক্ষে সমস্যার কথা কাউকে বলাও কঠিন।’’ এক মহিলা আইনজীবী বলেন, ‘‘মা-বোনদের কী অবস্থা হয়, ভাবতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে অনেককেই পুকুর পাড়ে বা অন্যত্র আড়াল খুঁজতে হয়। অবিলম্বে এই সমস্যা মেটানো উচিত।’’

জেলা পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, আদালত চত্বরের সমস্যার ব্যাপারে তাঁরা কোনও নির্দেশ পাননি। তবে, প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গভর্নমেন্ট হাউসের পাশে একটি পাম্প হাউস রয়েছে। সেটি অকেজো। ওই জায়গায় দু’টি শৌচাগার গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement