টেস্টে প্রশ্নপত্র দেবে পঞ্চায়েত সমিতি

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে কড়া হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, প্রশ্নপত্র তৈরি করাকে কেন্দ্র করে দলের একাধিক শিক্ষক সংগঠনের খেয়োখেয়ি রুখতেই আসরে নেমেছে পঞ্চায়েত সমিতি।

Advertisement

নুরুল আবসার

পাঁচলা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:২৯
Share:

গ্রামোন্নয়ন তাদের কাজ। কিন্তু হাওড়ার পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতি এখন ব্যস্ত এলাকার স্কুলগুলির মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টের প্রশ্নপত্র তৈরিতে!

Advertisement

হল কী? এলাকার শিক্ষকদের একাংশ বিভ্রান্ত। পড়ুয়ারা চিন্তায়। তৃণমূলের কেউ বলছেন, ‘‘ভালই হল।’’ কারও মুখে উল্টো সুর।

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে দিনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে কড়া হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, প্রশ্নপত্র তৈরি করাকে কেন্দ্র করে দলের একাধিক শিক্ষক সংগঠনের খেয়োখেয়ি রুখতেই আসরে নেমেছে পঞ্চায়েত সমিতি।

Advertisement

গত ১৪ সেপ্টেম্বর এলাকার ২২টি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বৈঠক ডাকেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলেরই আব্দুল জলিল। তিনি জানান, কারও কাছে যাওয়ার দরকার নেই। প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপা এবং স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবে সমিতি। এর জন্য পয়সাও দিতে হবে না।

জলিল বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই টেস্টের প্রশ্নপত্র তৈরি নিয়ে জটিলতা হচ্ছিল। প্রশ্নপত্রের মানও ঠিক থাকছিল না। তাই সমিতি এই দায়িত্ব নিয়েছে। কড়া প্রহরায় প্রশ্নপত্রগুলি স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ প্রশ্নপত্র তৈরির জন্য ইতিমধ্যে ওই সব স্কুলের বাছাই শিক্ষকদের নিয়ে কমিটিও গড়া হয়েছে বলে জলিল জানিয়েছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতি কি প্রশ্নপত্র তৈরি করাতে পারে? কোনও মন্তব্য করতে চাননি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন, এটাই উচিত।’’

বাম আমলে টেস্টের প্রশ্নপত্র মূলত তৈরি করত বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘এবিটিএ’। স্কুলগুলির কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ছাপার খরচ হিসেবে তারা একটি নির্দিষ্ট টাকা নিত। রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূল অনুগামী শিক্ষক সংগঠনগুলি প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব নেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও খেয়োখেয়ি এড়ানো যায়নি। পাঁচলায় তা লাগামছাড়া হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ, তিনটি শিক্ষক সংগঠন নিজেদের প্রকৃত ‘তৃণমূল অনুগামী’ দাবি করে তাদের কাছ থেকেই প্রশ্নপত্র নেওয়ার আর্জি জানায়। এতদিন প্রশ্নপ্রতি ১৫ টাকা করে দিতে হলেও এ বার ‘ফি’ কম করারও আশ্বাস দেয়। কোনও সংগঠন আবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম করে হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ।

এই অবস্থায় পঞ্চায়েত সমিতি আসরে নামায় কী বলছেন প্রধান শিক্ষকেরা? মোটের উপরে সকলেই খুশি। এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আগে প্রশ্নপত্র তৈরি করাতে অনেক খরচ হতো। এ বার বিনা খরচে মিলছে।’’ আর এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘সমিতি হস্তক্ষেপ করে ভালই করেছে। টাকা খরচ হল না।’’ তবে, শিক্ষক সংগঠনগুলি এই উদ্যোগ মেনে নেয়নি। একটি সংগঠন‌ের পক্ষে শেখ সিরাজ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির এই কাজের বৈধতা আছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।’’ অন্য একটি সংগঠনের পক্ষে সুজয় বাগের টিপ্পনী, ‘‘সমিতির উদ্যোগে কোন স্কুল আপত্তি জানাবে? স্কুলের উন্নয়ন তো ওদের উপরেই নির্ভর করে।’’

পঞ্চায়েত সমিতি অবশ্য দাবি করেছে, তারা রাজ্যে নজির গড়তে যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement