চন্দননগরের পুরপ্রধান রাম চক্রবর্তী।
মঙ্গলে উষা। বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা।
হুগলিতে শাসক দল বুধবার দিনটাকেই শুভ হিসেবে বেছে নিল জেলার পাঁচটি পুরসভার চেয়ারম্যানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন হিসেবে। গঙ্গাপারের পুরসভা বাঁশবেড়িয়া, হুগলি-চুঁচুড়া, চন্দননগর, উত্তরপাড়া ছাড়াও ডানকুনিতে এদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানপর্ব নির্বিঘ্নেই শেষ হয়। উত্তেজনার একটা চোরাস্রোত ছিলই। ছিল উৎকন্ঠা। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই এদিন সদ্য নির্বাচিত শাসকদলের কাউন্সিলরেরা কোথাও কোনও বেচাল আচরণ করেননি।
বস্তুত এবার চেয়ারম্যান নির্বাচনের দলীয় ব্যাটন দলনেত্রী নিজের আস্তিনেই রেখে ছিলেন। দলীয় স্তরে কিছু খুরচো গুজব থাকলেও শেষ বিচারে হুগলিতে কেউ এদিন ট্যাঁ-ফোঁ করার সাহস দেখাননি। জেলা সিপিএম নেতৃত্ব এদিন দলীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভোটাভুটিতে যাবে না। তার ফলে উত্তেজনার পারদ এক ধাক্কায় অনেকটাই নেমে যায়। শাসকদলের উৎসবের চেহারা নেয় শপথগ্রহণ পর্ব।
উত্তরপাড়ায় প্রত্যাশিতভাবেই দিলীপ যাদব নতুন চেয়ারম্যান হন। ডানকুনিতে হাসিনা সবনম, চন্দননগরে রাম চক্রবর্তী এবং হুগলি-চুঁচুড়াতে গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। বাঁশবেড়িয়ায় এবার কে চেয়ারম্যান হন তা নিয়ে উৎসাহ কিছু কম ছিল না। কেন না সেখানে ভোটের আগে শাসকদলের অন্দরে কোন্দলের জেরে তীব্র চাপন-উতোর শুরু হয়। বিদায়ী চেয়ারম্যান নিজে স্থানীয় ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যান সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ নিয়ে। শেষমেশ প্রাক্তন পুরপ্রধান রথীন্দ্রনাথ দাস মোদক নিজে পুলিশি প্রহরায় প্রচারে নামেন। এবার সেখানে নতুন চেয়ারম্যান হলেন অরিজিতা শীল।
অরিজিতা এর আগেও বাঁশবেড়িয়া পুরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। এবার এলেন বাড়তি দায়িত্বে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকার সাধারন মানুষকে সঙ্গে তিনি কাজ করতে চান বলে তিনি জানিয়েছেন। অরিজিতার কথায়,‘‘এলাকায় একটি প্রেক্ষাগৃহের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। সেই কাজ শুরু করার পাশাপাশি শশ্মান ঘাটের চুল্লি সারানোর কাজও আমার অগ্রধিকারের তালিকায়।’ তার সংযোজন,‘‘এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেব।’’ উত্তরপাড়ার সদ্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েই কতকগুলি ক্ষেত্রে তিনি কড়া সিদ্ধান্ত নিতে চান বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পুরএলাকাকে প্লাস্টিক বর্জিত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিকল্প চটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কোন নাগরিক রাস্তায় ময়লা ফেললে বা নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার উপর ফেলে রাখলে পুরসভা জরিমানা করবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রাথমিকভাবে আমরা পুরবোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টি প্রচার করে নাগরিকদের জানিয়ে দেব। তার পরবর্তী ধাপে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হবে। নাহলে এই বিপদ রোখা যাবে না।’’
উত্তরপাড়া লাগোয়া ডানকুনি পুরসভায় দলের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এদিন কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর দলে যোগ দেন। বস্তুত ডানকুনি পুরসভায় এবার বিরোধীদের ফল ভাল হয়েছে। সিপিএম পেয়েছে ৮টি আসন। একটি করে নির্দল ও কংগ্রেস। সেখানে যদিও দলের সিদ্ধান্ত মেনে এদিন ভোটাভুটিতে অংশ নেননি সিপিএম।
দলের অন্যতম জেলা সম্পাদক সুবীর মুখোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘‘দলের অনুমতি সাপেক্ষে হাসান মণ্ডল এবং কৃষ্ণেন্দু মিত্র ডানকুনির সদ্য জয়ী দুই কাউন্সিলর দলে যোগ দেন। ওঁরা আমাদের ঘরের ছেলে। তাই ওরা ফেরায় ডানকুনিতে দলীয় সমর্থকদের মধ্যে এদিন উৎসবের মেজাজ।’’
ছবি: তাপস ঘোষ।