প্রতীকী ছবি।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাস পেরোতে চলল। এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে এখনও কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি। ফলে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কী ভাবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের। কাজে গতি আনতে তাই বিডিও-দের ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার।
শনিবার বিডিও এবং বিভিন্ন জেলার নোডাল অফিসারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে ওই নির্দেশ দেন প্রকল্পের রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার। রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, নানা কারণে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম পর্ব পর্যন্ত এই প্রকল্পে শ্রমদিবস (এক জন শ্রমিক এক দিনে যতটা কাজ করেন) সৃষ্টি আশানুরূপ হয়নি। কী ভাবে ঘাটতিগুলি পূরণ করে কাজে গতি আনা যায়, সে বিষয়েই বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি করে শ্রমদিবস বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে এই প্রকল্পে। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আশা করা যায় ২৮
কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।’’
গত কয়েক বছর ধরে ওই প্রকল্পে শ্রমদিবস সৃষ্টির নিরিখে দেশের মধ্যে রাজ্যের স্থান ছিল উপরের দিকে। কিন্তু এ বার কী হবে? প্রশ্নটা থাকছেই। কারণ, পরিসংখ্যানে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা।
ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যে ওই প্রকল্পে ২৮ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে মাত্র সাড়ে ছ’কোটির কাছাকাছি। অথচ, গত দু’বছর ধরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি হওয়ার নজির রয়েছে। চলতি মাসের আর যে ক’দিন বাকি রয়েছে, তাতে সেই ঘাটতি পূরণ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। হাওড়া জেলায় গত বছর এই সময়ে যেখানে ২১ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছিল, এ বারে সেখানে হয়েছে মাত্র ১১ লক্ষ! এ ভাবে চললে অর্থবর্ষের শেষে ২৮ কোটি শ্রমদিবস বা পরিবারপ্রতি ৭০ দিনের বেশি কাজ সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে না বলেই আশঙ্কা করছেন পঞ্চায়েত কর্তাদের একটা বড় অংশ।
কেন কমল শ্রমদিবস সৃষ্টির হার?
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের বক্তব্য, ‘সিকিওরড’ নামে একটি নতুন সফটওয়্যার (প্রকল্পের খুঁটিনাটি সব তথ্য ওই সফটওয়্যারে ‘আপলোড’ করতে হবে পঞ্চায়েতগুলিকে) চালু করতে গিয়ে প্রায় দু’মাস কাজ বন্ধ ছিল। তার উপরে মাটি কাটা বন্ধে কেন্দ্রীয় নির্দেশকে ঘিরেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। যথেচ্ছ মাটি কাটার কাজের বদলে স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টিতে জোর দেওয়া হয়। যেমন, বনসৃজন, কংক্রিটের রাস্তা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ইত্যাদি। প্রধানদের একাংশের বক্তব্য, মাটি কাটা এবং খাল সংস্কারের কাজ বন্ধ হওয়ায় এই প্রকল্পে শ্রমদিবস সৃষ্টিতে বড় অন্তরায় হয়ে যায়। কারণ এই দু’টি কাজেই বেশি জবকার্ডধারীকে নিয়োগ করা যেত, যা আর হচ্ছে না।
পঞ্চায়েত কর্তারা জানান, অর্থহীন ভাবে মাটি কাটার কাজ করে যে ভাবে হোক শ্রমদিবস সৃষ্টি করার প্রয়াস বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তবে, সম্পদ সৃষ্টির জন্য মাটি কাটার কাজ পঞ্চায়েতগুলি করতেই পারে। ইতিমধ্যে ছোট খাল কাটারও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।