শয্যা নেই। অগত্যা মাটিতেই ঠাঁই ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর। বুধবার, হাওড়া হাসপাতালে। — নিজস্ব চিত্র
সপ্তাহ দুয়েক আগে বর্তমান পরিকাঠামোর উপরে ভিত্তি করে হাওড়া পুরসভা দাবি করেছিল, এ বছর হাওড়ায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। কারণ এই সব রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর্মীরা বছরভর কাজ করেছেন।
কিন্তু পুরসভার সেই দাবিটাই পুরোপুরি যেন বদলে গিয়েছে। শহরে নিত্য দিন লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে অজানা জ্বর নিয়ে সরকারি হাসপাতালে ও নার্সিংহোমগুলিতে রোগীদের ভিড়। খোদ পুরসভা অবশ্য এই অবস্থার জন্য নিজেদের পরিকাঠামোর দুর্বলতাকে দায়ী করেছে। এখন পুরসভার দাবি, এই পরিকাঠামো নিয়ে হাওড়া শহরের ডেঙ্গি মোকাবিলা সম্ভব নয়।
সূত্রের খবর, মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে, বিশেষত ডেঙ্গির ক্ষেত্রে উন্নত পরিকাঠামো বলতে যা বোঝায় তা হাওড়া পুরসভার কোনওকালেই ছিল না। এখনও পর্যন্ত না আছে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী, না আছে পতজ্ঞ বিশারদ। প্রশ্ন উঠেছে, মশাবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আছে, পুরসভা এমন দাবি তা হলে কেন করেছিল?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বুধবার রাত পর্যন্ত শুধু হাওড়া জেলা হাসপাতালে প্রায় ১০৩ জন রোগীর রক্তে ডেঙ্গুর জীবানু মিলেছে। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে অজানা জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস জানান, গত তিন দিনে হাওড়া পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকেই জ্বর নিয়ে রোগী
ভর্তি হচ্ছেন। মাত্র দু’এক জন আসছেন পঞ্চায়েত এলাকা থেকে।
হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া হাসপাতালে হওয়া এলাইজা পরীক্ষায় গত শনিবার পর্যন্ত মোট ৩৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবানু পাওয়া গিয়েছিল। মঙ্গলবার সেই সংখ্যাটা গিয়ে পৌঁছয় ৮৩তে। বুধবার হাওড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮৩ জনের রক্তপরীক্ষা করার পরে আরও ২০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবানু পাওয়া গিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, আক্রান্তেরা সকলেই পুরসভা এলাকার বাসিন্দা।
তা হলে হাওড়া পুরসভা কী পরিস্থিতির নিরিখে ডেঙ্গি মোকাবিলায় যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি?
পেশায় চিকিৎসক হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বক্তব্য, ‘‘মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে লড়তে আরও ভালও পরিকাঠামো প্রয়োজন এটা ঠিকই। প্রয়োজন আরও দক্ষ কর্মী ও জনসচেনতা বৃদ্ধির।’’ হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই পরিকাঠামো নিয়ে গোটা হাওড়া শহরে ডেঙ্গি মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। তা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করেছি। অনেকটাই সফল হয়েছি।’’
কিন্তু পরিকাঠামো চেয়ে কী রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল? মেয়র বলেন, ‘‘দক্ষ কর্মী চেয়ে আমরা অনেক আগেই আবেদন করেছি। তবে পুরসভা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য নিজেদের উদ্যোগেই এলাইজা পরীক্ষার মেশিন বসিয়েছে। রাজ্য সরকারও প্রয়োজন মতো রক্ত পরীক্ষার কিট সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে।’’
মেয়রের বক্তব্য, এ সব সত্ত্বেও যা প্রয়োজন তা হল মশাবাহিত রোগ নিয়ে শহরের মানুষের সচেতনতা বাড়ানো। এ জন্য পুরস্বাস্থ্য বিভাগকেও সক্রিয় হতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে। মেয়র জানান, গত ৬ দিন ধরে হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার ও কর্মীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি লার্ভিসাইড তেল-সহ মশা মারার কামান ব্যবহার করছেন। তাঁর আশা, গত বারের মতো ডেঙ্গি মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়বে না। এ দিনই হাওড়া থানা সংলগ্ন পুলিশ আবাসনে ২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, আজ, বৃহস্পতিবার হাওড়া জেল ও ওই পুলিশ আবাসনে মশা মারতে পুরসভার দল পাঠানো হবে।