পুলিশ কম, তাই দাপট দুষ্কৃতীর

চলতি বছরের মাঝামাঝি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলিতে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১১
Share:

পুলিশ বাড়ন্ত! অপরাধ দমন করবে কে?

Advertisement

কুড়ি দিনের মাথায়, গত বুধবার ব্যান্ডেলের সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের কিনারা করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। কিন্তু অক্টোবর-নভেম্বরে শুধু জেলা সদর চুঁচুড়াতেই আটটি ঘটনার তদন্তে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা অন্ধকারে। ধরা পড়েনি কেউ। এর সঙ্গে রয়েছে কমিশনারেটের আওতায় থাকা অন্য এলাকাগুলির অপরাধের তদন্তের দায়িত্বও। নাজেহাল হচ্ছেন কমিশনারেটের কর্তারা। অবস্থা এমনই, পুলিশকর্মীর অভাবে কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েকটি ফাঁড়িও। একই অবস্থায় তদন্ত এবং প্রতিদিনের কাজ সামলাতে কালঘাম ছুটছে হুগলি (গ্রামীণ) জেলা পুলিশেরও।

চলতি বছরের মাঝামাঝি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলিতে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। হুগলি শিল্পাঞ্চলের ডানকুনি থেকে চুঁচুড়া পর্যন্ত মোট ৯টি থানা (দু’টি মহিলা থানা-সহ) এলাকা নিয়ে তৈরি হয় কমিশনারেট। হুগলির বাকি এলাকার থানাগুলিকে নিয়ে গঠিত হয় জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ। কিন্তু কমিশনারেটের জন্য কিছু পুলিশকর্তাকে পাঠানো ছাড়া বাড়তি নিয়োগ হয়নি। জেলাতে যে পুলিশকর্মীরা ছিলেন, তাঁদেরই ভাগ করে দেওয়া হয় থানাগুলিতে।

Advertisement

প্রথম থেকেই উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া পুলিশ প্রশাসনে এই ভাগ নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। নিচুতলার পুলিশকর্মীরাও প্রশ্ন তুলেছিলেন। শিল্পাঞ্চল জুড়ে বাড়তে থাকা অপরাধের সংখ্যা দেখে এখন পুলিশ প্রশাসনে ওই বিভাজনের প্রয়োজনীতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) বা এএসআই (অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর) স্তরে নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ। কবে চালু হবে জানি না। এখন কনস্টেবল স্তরে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। কী হবে জানি না। সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

চুঁচুড়া থানার আওতায় সাতটি ফাঁড়ি রয়েছে। কমিশনারেট হওয়ার আগে ওই থানায় মোট পুলিশকর্মীর সংখ্যা ছিল ৬২। এখন ২১। একমাত্র ব্যান্ডেল ফাঁড়ি ছাড়া প্রতিটি কার্যত বন্ধ। ফাঁড়ি পাহারায় বসানো হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারকে। উত্তরপাড়া থানার অধীনে চারটি ফাঁড়ি রয়েছে। তার মধ্যে কার্যত বন্ধ কোতরং এবং থানায় কাছের ফাঁড়িটি। কানাইপুর এবং কোন্নগর ফাঁড়িতে হাতেগোনা অফিসার থাকলেও সেখানে সিভিক ভলান্টিয়াররাই ভরসা। ওই থানায় পুলিশকর্মীর সংখ্য কুড়িতে ঠেকেছে। ডানকুনি থানা এলাকা দিয়ে গিয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। অথচ, পুলিশকর্মীর অভাবে যান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা যায়নি বলে মানছেন পুলিশকর্তারা। এমনকী, ব্যাঙ্ক খোলা-বন্ধের সময় সিভিক ভলান্টিয়ার পাঠাতেও সমস্যায় পড়ছেন পুলিশকর্তারা। অনেক এলাকাতেই রাতে নজরদারির জন্য পুলিশের ‘সাইকেল-পার্টি’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

কমিশনারেটের এক কর্তার খেদ, ‘‘আমাদের বলা হচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে কাজ চালাতে। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারই বা আমাদের হাতে কোথায়? মেরেকেটে সাড়ে ৭০০। এতগুলি থানা, ভাগে কতজন পড়বে?’’ নিয়োগ না হলে অবস্থা যে পাল্টাবে না, তা মানছেন অনেক পুলিশকর্তাই। এমনকী, পরিস্থিতির অবনতিরও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement