Haripal

পাহারায় গ্রামবাসী, বলদবাঁধে বাড়ছে পরিযায়ীর ঝাঁক

হরিপালের কৈকালা পঞ্চায়েতের বলদবাঁধে আটটি জলাশয় রয়েছে। বঙ্গে ঠান্ডা মালুম হলেই বিদেশ থেকে এখানে উড়ে আসে পাখির ঝাঁক।

Advertisement

দীপঙ্কর দে

হরিপাল শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৯
Share:

অতিথি: বলদবাঁধে পরিযায়ীর পাখির দল। — নিজস্ব চিত্র

গ্রামে পোস্টার পড়েছে। কেউ যাতে ওদের উত্যক্ত না করেন। গ্রামবাসীর আদরে-আপ্যায়নে শীতের অতিথিরা মহানন্দে ঘুরে বেড়ায় নিরিবিলিতে। কেউ উড়ে যায় খাবারের খোঁজে। কেউ ব্যস্ত থাকে জলকেলিতে।

Advertisement

হরিপালের কৈকালা পঞ্চায়েতের বলদবাঁধে আটটি জলাশয় রয়েছে। বঙ্গে ঠান্ডা মালুম হলেই বিদেশ থেকে এখানে উড়ে আসে পাখির ঝাঁক। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি। জলাশয়গুলি হয়ে উঠেছে তাদের ঠিকানা। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে কোমর বাঁধছেন গ্রামবাসীরা।

তাঁরা জানান, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকায় অনেকেই এখানে শীতের সময়ে চড়ুইভাতি করতে আসতেন। জোরে জোরে মাইক বক্স বাজত। স্রেফ আনন্দ নিতে পাখিদের ইট-পাটকেল ছোড়া হত। এতে পাখিদের বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছিল। কমছিল পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মানুষজন পাখিদের নিরাপদ পরিবেশের দিকে নজর দেন। তাঁদের বক্তব্য, চড়ুইভাতি হলে উনুনের ধোঁয়ায় বাতাস ভারী হয়ে যায়। জলাশয় ভরে যায় থার্মোকলের থালায়। ছড়ায় দূষণ। মাইক-বক্সের দাপট তো আছেই! গ্রামবাসীদের উদ্যোগে চড়ুইভাতি বন্ধ হয়। সেই ধারাই তাঁরা চালিয়ে যেতে চাইছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার এই নিয়েই গ্রামবাসীরা পোস্টার সেঁটেছেন। তাতে আর্জি জানানো হয়েছে, কেউ যাতে পাখি না মারেন। পাখিদের যেন ভাল ভাবে বাঁচতে দেওয়া হয়। চড়ুইভাতি করা, মাইক বাজানো যাতে না হয়। এক যুবক বলেন, ‘‘কত সুন্দর সুন্দর পাখি আসে এখানে। ওরা আমাদের গ্রামের সম্পদ। তাই ওদের নিরাপদে রাখা আমাদের দায়িত্ব। তাই, সবাইকে সতর্ক করে পোস্টার সাঁটা হয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা স্বরূপ মিত্র জানিয়ে দেন, ‘‘আমাদের নজরদারি চলবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গরমের শুরুতে পাখিরা ফিরে যেতে শুরু করে। কিন্তু এ বার অনেক পাখিই থেকে গিয়েছে। কারণ হিসেবে তাঁরা মনে করছেন, লকডাউনের সময় দূষণ কমেছে। মানুষের আনাগোনাও কম ছিল। সব মিলিয়ে এপ্রিল-মে-জুনেও এখানকার পরিবেশের সঙ্গে পাখিরা খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। তাই, এলাকা ছাড়েনি। চড়াই, ঘুঘু, দোয়েল, ময়নাদের পাশাপাশি স্বচ্ছন্দে থেকে গিয়েছে পরিযায়ীরাও।

চণ্ডীতলার বাসিন্দা, পাখিপ্রেমী হিন্দোল আহমেদ বলেন, ‘‘ঠান্ডায় নিরুপদ্রবে থাকা এবং খাবারের সংস্থান রয়েছে এমন জায়গা পরিযায়ী পাখিরা বেছে নেয়। ডিজে-মাইক বা বাজি-পটকায় এরা মানিয়ে নিতে পারে না। অনেক পাখি দিনের বেলা ঘুমোয়। জোরাল শব্দে তাদের বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটে। হৃদযন্ত্র দুর্বল হওয়ায় অতিরিক্ত আওয়াজে মারাও যেতে পারে। সুতরাং, পাখিদের থাকার অনুকূল পরিবেশের জন্য বলদবাঁধের গ্রামবাসীদের উদ্যোগ অত্যন্ত ভাল।’’

গ্রামবাসী এবং পাখিপ্রেমীদের বক্তব্য, বলদবাঁধ এখন পাখিদের জন্য অনেক নিরাপদ। তাই পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে তাঁদের ধারণা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement