তৃণমূলের কড়া নজরে স্ট্রংরুম

গত ৬ মে হাওড়া এবং হুগলির পাঁচ লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে। তার পর থেকে প্রতিদিন রাতভর আরামবাগ কেন্দ্রের স্ট্রংরুম কালিপুরের নেতাজি মহাবিদ্যালয় পাহারা দিয়ে চলেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০০:৫৮
Share:

সতর্ক: স্ট্রংরুমের সামনে পাহারা তৃণমূলের। আরামবাগের কালীপুরে নেতাজি মহাবিদ্যালয়ে। ছবি: মোহন দাস

নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ রয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তবু রাস্তায় ‘পাহারা’য় রয়েছেন ওঁরা!

Advertisement

গত ৬ মে হাওড়া এবং হুগলির পাঁচ লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে। তার পর থেকে প্রতিদিন রাতভর আরামবাগ কেন্দ্রের স্ট্রংরুম কালিপুরের নেতাজি মহাবিদ্যালয় পাহারা দিয়ে চলেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। কলেজ থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে তাঁরা শিবির করেছেন। নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রদীপ সিংহ। সকালে দফায় দফায় থেকেছেন মহিলারা। রাতে পুরুষেরা।

তৃণমূলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দী বলেন, “মোদী-সেনাদের নিরাপত্তায় থাকা ইভিএম পাল্টে ফেলার আশঙ্কা আছে। ভোটের রাত থেকেই পাহারা চলছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর পর্যায়ক্রমে প্রতি দফায় ৩০ থেকে ৪০ জন করে পাহারা দিয়েছি আমরা।’’

Advertisement

পিছিয়ে নেই বিজেপিও। তারা শিবির না-করলেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বিজেপি নেতা আশিস মালিকের নেতৃত্বে কলেজের মূল ফটক সংলগ্ন তেঁতুল গাছের কাছে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই টহলদারি চালিয়েছেন কর্মী-সমর্থকেরা। দলের আরামবাগ জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “দুষ্কৃতীদের দল তৃণমূলকে কড়া নজরদারির মধ্যেই রেখেছি আমরা।”

ত্রি-স্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আজ, বৃহস্পতিবার ভোট গণনা হবে। ভোট হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্ট্রংরুমগুলিতে পাহারার দায়িত্ব আধা সামরিক বাহিনীর উপরে বর্তায়। তবু নিশ্চিন্ত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলি। হাওড়ার উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে বাণীতবলার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এবং বেলপুকুর কলেজে। দু’জায়গাতেই তৃণমূলের তরফে পাহারাদারি চালানো হয়েছে বলে জানান হাওড়া উলুবেড়িয়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়।

গণনা কেন্দ্রে আজ রাজ্য পুলিশের কার্যত কোনও অস্তিত্বই থাকছে না। গেটে তল্লাশি থেকে ইভিএম স্ট্রং-রুম থেকে বের করে গণনা কেন্দ্রে পৌঁছানো— পুরোটাই সামলাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তা হলে কি গণনা কেন্দ্র থেকে এ বার রাজ্য পুলিশের ছুটি?

তেমনটা অবশ্য মনে করছেন না হুগলি (গ্রামীণ) ও চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, গণনার দিনে গণনা কেন্দ্রের বাইরেও কাজ কিছু কম থাকে না। কারণ, গণনা কেন্দ্রের বাইরে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উৎসাহী কর্মী-সমর্থকেরা ফলাফল জানতে ভিড় করেন। প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের নিরিখে তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলমালের আশঙ্কা থাকে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে সে সব সামলানোর দায়িত্ব রাজ্য পুলিশেরও।

গণনা কেন্দ্রে এ বার নিরাপত্তার বজ্র-আঁটুনি। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে কেন্দ্রের বাইরে। চন্দননগর কমিশনরাটের ডিসি (সদর) বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘গণনা কেন্দ্রের ড্রপ-গেটের ১০০ মিটার দূরে গাড়ি রেখে ঢুকতে হবে। কেন্দ্রের আশপাশে অবাঞ্ছিত ভিড় জমতে দেওয়া হবে না। পাঁচ বা তার বেশি সংখ্যায় মানুষ জড়ো হয়ে সমস্যা সৃষ্টি করলে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করতে পারে।’’

হুগলিতে তিনটি লোকসভা আসন। হুগলি কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে এইচআইটি কলেজে। আরামবাগ কেন্দ্রের গণনা হবে আরামবাগ নেতাজি কলেজে এবং শ্রীরামপুর কেন্দ্রের গণনা শ্রীরামপুর কলেজে। চন্দননগর কমিশনারেটে তিন কোম্পানি বিএসএফ শুধুমাত্র গণনা কেন্দ্রের কাজেই নিয়োজিত রয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিটি গণনা কেন্দ্রের গোটা চত্বর সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। গ্রামীণ বিধানসভা এলাকার প্রতিটির জন্য ১৬টি টেবিল এবং শহর কেন্দ্রিক বিধানসভাগুলির জন্য ১৮টি টেবিলে ভোট গণনা চলবে। যাঁরা গণনা কেন্দ্রে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন, তাঁদের স্ট্রং-রুমে ভোর ৬ টার মধ্যে ঢুকতে হবে। সকাল আটটা থেকে গণনা শুরু হবে।

বৈদ্যবাটি (শহর) তৃণমূলের সভাপতি অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘এ বার কড়াকড়ি বেশি। গণনায় দলের তরফে আমাদের যে প্রতিনিধিরা থাকবেন, তাঁরা শুধু একটি করে প্যাড ও কলম নিয়ে ভিতরে যেতে পারবেন। মোবাইল নিয়েও ভিতরে যাওয়া যাবে না। পানীয় জলও নয়।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রশাসন ভিতরে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement