প্রতীকী ছবি।
একেই প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ১৯ জন। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের পাঁচটি ভিভিপ্যাটে ভোটদাতাদের স্লিপ গোনার কাজ। এর উপরে কোনও ইভিএম কাজ না করলে সেটির সংশ্লিষ্ট ভিভিপ্যাট আগে গোনার নির্দেশ।
সব মিলিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের চূড়ান্ত নির্বাচনী ফল বেরোতে দিন গড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। তাদের বক্তব্য, প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ইভিএমের সংখ্যাও যে কোনও কেন্দ্রের তুলনায় দ্বিগুণ এবং দ্বিতীয়ত, মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য যে ৩৫টি ভিভিপ্যাট মেশিন রয়েছে, সেখানে ১৯ জন প্রার্থীর ভোটের স্লিপ গুনতে হবে আলাদা করে। ফলে প্রতিটি রাউন্ডের ফল বেরোতে যথেষ্ট সময় লাগবে। গোটা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
হাওড়ার জেলাশাসক তথা জেলার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের সব নির্দেশিকা মেনে হাওড়া সদরে ১৯ জন প্রার্থীর ভোটের ফলাফল প্রকাশ করতে সময় লাগবে। একটি বিধানসভা কেন্দ্রে ৫টি ভিভিপ্যাট আলাদা করে গোনা হবে। সে ক্ষেত্রে ভোটের চূড়ান্ত ফল বেরোতে অনেকটাই সময় যাবে।’’
ভোট গণনায় যে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগবে, তা বুঝে গণনা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষায় থাকা রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যাতে অধৈর্য হয়ে গোলমাল না করেন, সে কারণে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। তীব্র গরমে যে সরকারি কর্মীরা গণনা কেন্দ্রের ভিতরে থাকবেন, তাঁদেরও আগে থেকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
হাওড়ায় সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গণনার জন্য দু’টি কেন্দ্র নির্দিষ্ট হয়েছে। বালি, উত্তর হাওড়া এবং মধ্য হাওড়ার ভোট গোনা হবে বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন শিক্ষণ মন্দিরে। শিবপুর, দক্ষিণ হাওড়া, সাঁকরাইল ও পাঁচলা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে শিবপুর আইআইইএসটি ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থিত রাজ্য সরকারের শিবপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (আইটিআই)-এর তেতলা বাড়িতে। ওই দুই গণনা কেন্দ্রেই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। প্রথম স্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তর অর্থাৎ গণনা কেন্দ্রে প্রবেশের মুখে এবং যে ঘরে গণনা হবে, তার বাইরে নিরাপত্তার ভার রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে।
বুধবার শিবপুর আইআইইএসটি-র তিন নম্বর গেটের পাশে আইটিআই ভবনের সামনে গিয়ে দেখা গেল, বাঁশের ব্যারিকেড করে ভিতরে ঢোকার রাস্তা দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ব্যারিকেডের ডান দিকের রাস্তা ধরে ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল, বালির বস্তা দিয়ে তৈরি হয়েছে বাঙ্কার। ও পারে কার্বাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই জওয়ান। ‘কাঁহা জানা হ্যায়?’ ছুটে এল প্রশ্ন। ভোট গণনা কেন্দ্রের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দেখতে আসার কথা জানাতেই এক জওয়ান হিন্দিতে জানালেন, কেন্দ্রের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই। রাজ্য পুলিশ যে স্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে, বড়জোর সেই জায়গা পর্যন্ত যাওয়া যেতে পারে। তত ক্ষণে চলে এসেছেন আরও ৫-৬ জন সশস্ত্র জওয়ান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাঁশের ব্যারিকেড পেরিয়ে ডান দিকে যেতেই দেখা গেল, আইটিআই-এর মূল গেটের আগেই বাঁশ দিয়ে আটকানো রাস্তা। এক কর্মী জানালেন, ওই দিক দিয়ে শুধু খাবার ঢুকবে। আর কারও যাওয়ার অনুমতি নেই। অগত্যা ওই পথ দিয়েই গণনা কেন্দ্রের বাইরে বেরিয়ে আসা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দু’টি গণনা কেন্দ্রের বাইরে ১০০ মিটার এলাকা ব্যারিকেড করে দেওয়া হবে। কোনও যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখানোর পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা দেহ তল্লাশি করবেন। তার পরেই গণনা কেন্দ্রের ভিতরে ঢোকা যাবে।