অমান্য: লকডাউনের মধ্যেও দোকান খোলা পান্ডুয়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার
কাপড়ের দোকান, জুতোর দোকান সব হাট করে খোলা। ক্রেতার চোখ টানতে স্ট্যান্ড ফ্যানের পসরা সাজানো দোকানের বাইরে। রাস্তায় চলছে অটো-টোটো।
রবিবার, অক্ষয় তৃতীয়ার সকালে হুগলি-হাওড়ার নানা জায়গায় এই ছবি দেখে অনেকেই ধন্দে পড়লেন। তবে কি লকডাউন উঠে গেল!
দোকানিরা দাবি করলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে তাঁরা দোকান খুলেছেন। তবে ব্যবসায়ীদেরই একাংশের আবার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ ঘিরে বিভ্রান্তির জন্য বিচ্ছিন্ন ভাবে কেউ কেউ দোকান খুলে্ছেন। রাজ্য প্রশাসনের তরফে সব দোকান খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট এলাকায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাদে আর কোনও দোকান খোলা যাবে না। অন্যান্য জায়গাতেও নজরদারি চলবে। কোথাও জমায়েত হলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দুপুরে গ্রামীণ হাওড়ায় পথে নামে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়, সবাই যেন লকডাউন মেনে চলেন। পাঁচ জনের বেশি কোথাও যেন জমায়েত না করা হয়।
এ দিন হুগলির পান্ডুয়া এবং বলাগড়ে জুতো, পোশাক, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, গয়নার দোকান খোলা ছিল। অটো-টোটো চলেছে। একটি কাপড়ের দোকানের মালিক বলেন, ‘‘টিভির খবরে দেখেছি, দোকান খুলতে বলা হয়েছে। তাই খুলেছি।’’ এমন দাবি একটি জুতোর দোকানের মালিকেরও।
পান্ডুয়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক গোপালচন্দ্র দে বলেন, ‘‘হঠাৎ কিছু দোকান খুলতে দেখে আমিও অবাক। রাজ্য সরকার দোকান খোলার নির্দেশ দেয়নি। পুলিশ দোকান বন্ধের অনুরোধ করেছে। সোমবার ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকের কথা ভাবছি।’’
এ দিন কিছু দোকান খুলেছে শ্রীরামপুরেও। চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরেও কিছু দোকান খোলা হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে দেয়। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু দোকান খোলার কথা পুলিশের কানে এসেছে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ পদক্ষেপ করবে।
হুগলি চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বসু বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় ব্যবসায়ীরা বিভ্রান্ত হয়ে দোকান খুলেছেন। তাঁদের বুঝতে হবে, এই বিষয়ে নির্দেশ দেবে রাজ্য সরকার। তারা এই ব্যাপারে কিছু বলেনি। কঠিন পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন যা নির্দেশ দেবে, আমরা সমর্থন করব।’’
শ্রীরামপুর, কোন্নগর, উত্তরপাড়ার মতো শহরে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ছোট দোকান নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বন্ধ হলেও বড় বিপণির ক্ষেত্রে তা হচ্ছিল না বলে ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে অভিযোগ ওঠে। সেগুলি রাত পর্যন্ত খোলা থাকছিল। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠন জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। রবিবার প্রশাসনের নির্দেশে বেলা ১২টার পরে ওই সব বিপণি বন্ধ করা হয়।
এ দিন হাওড়ার বাগনান স্টেশন রোডে মণিহারি, রেডিমেড পোশাক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মোবাইল ফোন-সহ নানা দোকান খুলে যায়। স্টেশন রোডে গিজগিজে ভিড় হয়। থানার সামনে থেকেই টোটো চলাচল শুরু করে। পুলিশ প্রথম দিকে কার্যত হাত গুটিয়ে বসেছিল বলে অভিযোগ। অনেক দোকানই অবশ্য পুরো খোলেনি। একটি ঝাঁপ খুলে কেনাবেচা হয়েছে।