বাজার লাগোয়া পুকুরই হয়ে উঠেছে আবর্জনা ফেলার জায়গা। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
দুপুর ১টা। মাথায় উপর গনগনে রোদ। কিন্তু ঝাঁপড়দহ ডিউক ইনস্টিটিউশনের উল্টোদিকে ডোমজুড় বাজারে ঢুকলে সেটা একদমই বোঝার উপায় নেই। চারপাশে অদ্ভূত আলো-আঁধারি পরিবেশ। বাইরের আলো প্রায় ঢোকে না। বাজারের নিজস্ব আলোর ব্যবস্থাও চোখে পড়ল না। দোকানদারেরা নিজেদের প্রয়োজনে যে যার মতো ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। যেখানে মুরগি কাটা হচ্ছে তার গায়েই মুদিখানার সামগ্রী নিয়ে বসেছেন এক দোকানি। কাটা মুরগির গায়ে বসা মাছি উড়ে বসছে পাশেই রাখা আদা, হলুদ, লঙ্কার উপর। বাজারে ঢোকার মুখে ডাঁই করা আবর্জনা ও বাতিল জিনিসপত্র। এ দিক সে দিক দিয়ে গড়িয়ে চলেছে নোংরা জল। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ডোমজুড়ের কেন্দ্রীয় বাজারের এটাই রোজকার ছবি।
সকাল ৯টা থেকে ১১টা অবধি বাজারে যদি কেউ প্রথম বার ঢোকেন তা হলে তিনি অসুস্থ বোধ করতেই পারেন। শুধু পরিকাঠামোগত সমস্যাই নয়। নিরাপত্তা ও পরিবেশগত সমস্যাও রয়েছে এখানে। বাজারের পিছন দিকে ভরদুপুরেই অবাধে মদ্যপানের আসরও চোখে পড়বে মাঝেমধ্যে। চোখে পড়বে এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা মদের বোতলও। যদিও বাজারটি বেসরকারি মালিকানাধীন। তবে বাজার পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। বাজার সংস্কারের জন্য মালিকপক্ষের অনীহার অভিযোগও শোনা গেল কমিটির কয়েক জন সদস্যের মুখে।
শুধু বাজারের হলঘরই নয়, রাস্তার দু’পাশেও পসরা বসে যায় সব্জি, আলু ও মাছ বিক্রেতাদের। ভিতর ও বাইরের প্রায় সব আর্বজনা পড়ে বাজার সংলগ্ন একটি পুকুরে। যার জেরে আস্ত একটা পুকুর প্রায় বুজতে বসেছে। সমস্যা মেটাতে স্থানীয় প্রশাসন যাতে বাজার অধিগ্রহণ করে এমন দাবিও উঠেছে। ডোমজুড় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তড়িত্ দেব বলেন, ‘‘একটা গোটা বাজার কিনে নেওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা পঞ্চায়েতের নেই। তবে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা যাতে বন্ধ হয় সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বাণীশ্রী সিনেমা হলের কাছে পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে সম্প্রতি বজ্র নিষ্কাশন কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়েছে। তিনি জানান, বাজারের সব আবর্জনা সেখানে নিয়ে গিয়ে শোধন করে সার তৈরি হবে। ঝাঁপড়দহ বাজার ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিমল কুমার দাস ও ডোমজুড় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বরুণ কুমার ঘোষ জানান, বাজারের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার দরবার করা হয়েছে।
শুধু বাজার এলাকা নয়, শহরের যত্রতত্র আবর্জনার ঠেলায় অতিষ্ঠ পথচারীরা। শহরে হরের পুল ছাড়া কোথাও সুলভ শৌচাগার নেই। সাধারণের ব্যবহারের জন্য কয়েকটি শৌচাগার থাকলেও সেগুলি বেহাল। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘শুনেছি খুব শীঘ্রই ডোমজুড় নাকি পুরসভা হবে। কিন্তু তার আগে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে আমরা মুক্তি চাই।’’
ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের (টিঙ্কাই) দাবি, ‘‘বাম আমলে পরিকল্পনার অভাবে ডোমজুড় শহর হিসেবে উন্নতির সুযোগ পায়নি। আমরা চেষ্টা করছি। তবে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। শীঘ্রই বাজারে আবর্জনা ফেলার জায়গা নির্দিষ্ট করা হবে।’’ পঞ্চায়েত সভাপতি বর্ণালি ঘোষ ও সহ-সভাপতি বাবলু মণ্ডল জানান, ডোমজুড় বাস টার্মিনাসের কাছে জেলা পরিষদ থেকে শৌচালয় তৈরি করার কথা। জেলা পরিষদ না করলে পঞ্চায়েত সমিতিই শৌচালয় তৈরি করবে।
(চলবে)