পরীক্ষার দিন ডিজে রুখতে এককাট্টা এলাকাবাসী

দীর্ঘদিন ধরেই হাওড়ার সালকিয়ায় শীতলার স্নানযাত্রা উৎসব হয়ে আসছে। এলাকার মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৪
Share:

শব্দ-যন্ত্রণা: শীতলা পুজোয় প্রতি বছর এ ভাবেই চলে একাধিক ডিজের দাপট। নিজস্ব চিত্র

ডিজে-র দাপট নিয়ে আগেও আপত্তি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ না হওয়ায় পুলিশ বা প্রশাসন, কোনও পক্ষই তাতে বিশেষ আমল দেয়নি বলে অভিযোগ। এ বার গোটা এলাকা এককাট্টা হয়ে বিরোধিতায় নামতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ। নড়েচড়ে বসেছেন এলাকার নেতারাও।

Advertisement

হাওড়ার সালকিয়ায় প্রতি বছরই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দিনভর ডিজে-র তাণ্ডব চলে। এ বার ওই শব্দদানবের অত্যাচার বন্ধ করতে সরাসরি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতি, ক্লাব, সাংস্কৃতিক মঞ্চ-সহ সাধারণ মানুষ। তাঁরা প্রত্যেকে লিখিত আবেদনে জানিয়েছেন, ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিন মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা। এলাকার বহু স্কুলে ওই পরীক্ষার আসন পড়ে। ডিজে বাজানো বন্ধ না হলে পড়ুয়াদের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। এলাকার মানুষের সমর্থন পেয়ে পুলিশও জানিয়ে দিয়েছে, শব্দমাত্রা ছাড়িয়ে ডিজে বাজিয়ে শব্দদূষণ ঘটালে এ বার আইনানুগ কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর জন্য আজ, বুধবার সকলকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠক ডেকেছে পুলিশ। সেখানেই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই হাওড়ার সালকিয়ায় শীতলার স্নানযাত্রা উৎসব হয়ে আসছে। এলাকার মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগ ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। স্নানযাত্রার দিন বিভিন্ন রাজ্য থেকে অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয় সেখানে। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে যান চলাচল। সারা দিন কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে থাকে উত্তর হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রতি বছরই মাঘী পূর্ণিমার দিন বা পরের দিন ওই স্নানযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর সেই দিনটি পড়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই ওই উৎসব উপলক্ষে সংগঠকেরা সকাল থেকে বড় বড় ডিজে বক্সে গান বাজাতে শুরু করেন। তা যে শুধু যন্ত্রণাদায়ক, তা-ই নয়, অনেকে ওই শব্দে অসুস্থও হয়ে পড়েন। সব থেকে বড় কথা, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ওই ডিজে বক্স বাজানো হলেও পরিবেশ দফতর বা পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা সুবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যে ভাবে ডিজে বাজিয়ে নাচগান চলে, তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। আদালত যে শব্দমাত্রা বেঁধে দিয়েছে, তার দুই বা তিন গুণ জোরে ওই ডিজে বাজানো হয়। বহু বয়স্ক মানুষ ওই দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে ওই স্নানযাত্রা উৎসব হয়। যার ফলে নাজেহাল অবস্থা হয় আশপাশের স্কুলগুলির পড়ুয়াদের। এ বছর ১৮ তারিখ অঙ্ক পরীক্ষা পড়ায় প্রমাদ গুনছেন এলাকার সচেতন বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই সেখানকার কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন এবং কয়েকটি স্থানীয় ক্লাব হাওড়ার পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করে জানিয়েছে যে, ওই দিন ডিজে বন্ধ রাখতে হবে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সালকিয়ার বহু স্কুলে পড়ুয়ারা এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। প্রতি বছর ওই স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে ভাবে অলিগলিতে ডিজে বাজানো হয়, তা বন্ধ না হলে প্রবল সমস্যায় পড়বে পড়ুয়ারা।

এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ স্নানযাত্রার সংগঠক ও বাকিদের নিয়ে আজ, বুধবার সমন্বয় বৈঠকে

বসলেও অনেকেই মনে করছেন, পুলিশ এ বছরও কিছু করতে পারবে না। যদিও হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আইন ভাঙলে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সকলকে শব্দমাত্রা মানতে বলব। যদি কেউ না শোনেন, তা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ ও সালকিয়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বাণী সিংহরায় বলেন, ‘‘ডিজে-র বিরুদ্ধে প্রতিবারই প্রতিবাদ করি। তবে এলাকার মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা ভেবে বেশি কিছু করা যায় না। এ বার বন্ধ করতেই হবে।’’

উত্তর হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি তথা সালকিয়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর গৌতম চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘মায়ের স্নানযাত্রায় ডিজে-র দাপট আগের থেকে কিছুটা কমেছে। এ বার তো বাজাতেই দেব না। কারণ, ওই দিন অঙ্ক পরীক্ষা। এলাকার মানুষও ডিজে বন্ধ করতে চাইছেন। তাই তাঁদের কথা ভেবে ওই দিন আমি রাস্তায় নেমে ডিজে বন্ধ করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement