হুগলিতেও বাম-কংগ্রেসের যৌথ মিছিলে জনসমাগম। —নিজস্ব চিত্র।
বাম-কংগ্রেসের বিভিন্ন যৌথ কর্মসূচিতে ভিড় বেড়েই চলেছে হাওড়ায়। দু’দলের নেতাদের দাবি, বিভিন্ন মহলে বিজেপি-তৃণমূলকে নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, বাম-কংগ্রেস ঠিক ততটাই উপেক্ষিত। দু’টি দলের যৌথ কর্মসূচিতে দিনের পর দিন ভিড় যে ভাবে বাড়ছে তাতে এটা প্রমাণিত, উপেক্ষার জায়গায় আর তাঁরা নেই। তাঁদের শক্তি বাড়ছে।
আগামী ২৬ নভেম্বর ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে সর্বভারতীয় কৃষকসভা। তার সমর্থনে মাসভর জেলা জুড়ে চলছে প্রচার কর্মসূচি। সেই প্রচারে শামিল হয়েছে কংগ্রেসও। তাতে ভিড় বাড়তে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলার বাম ও কংগ্রেস নেতাদের। রবিবার বাগনান ও আমতা দু’টি বিধানসভা এলাকায় বন্ধের সমর্থনে দু’টি পদযাত্রা হয়।
জেলার বাম নেতাদের দাবি, এই ভিড় আচমকা হচ্ছে না। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদলের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতি নিয়ে তাঁরা নিরন্তর মানুষের কাছে যাচ্ছেন। ফলে, তাঁদের প্রতি সাধারণ মানুষের একটা আস্থা তৈরি হয়েছে। বহু পুরনো কর্মী বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরছেন।
সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘আমপানে যে দূর্নীতি হয়েছে তার প্রতিবাদে আমরা জেলা জুড়ে তীব্র আন্দোলন করি। ব্লকে ব্লকে স্মারকলিপি দিই। মূলত আমাদের আন্দোলনের চাপেই ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। এটা আমাদের একটা সাফল্য। তৃণমূল রাজ্যে এবং বিজেপি কেন্দ্রে যে ভাবে অপশাসন চালাচ্ছে, তা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ভিড় করছেন মানুষ।’’
আমতার কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সহ-সভাপতি অসিত মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের দল একক ভাবে যেমন জেলা জুড়ে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে, তেমনই বামফ্রন্টের সঙ্গেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। প্রচূর কর্মী-সমর্থক আসছেন।’’
বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট হবে কিনা বা তার চূড়ান্ত রূপরেখা কী হবে তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, চলতি বছরের গোড়া থেকেই উভয় পক্ষ যৌথ ভাবে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমেছে। লকডাউনের জন্য পুরভোট পিছিয়ে যায়। কিন্তু তার আগে জোট হাওড়া ও উলুবেড়িয়া পুরসভা নির্বাচনে লড়াই করবে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। তারপরেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে দু’দল একসঙ্গে পথে নেমেছে।
বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক একসময়ে বেশ শক্তিশালী ছিল শ্যামপুরে। এই এলাকার দলীয় নেতা অসিতবরণ সাউ বলেন, ‘‘আমাদের ছেড়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন এমন অনেকে ফিরে এসেছেন। দলের কর্মী বৈঠকগুলিতে তাঁরা যোগ দিচ্ছেন। আন্দোলনে শামিল হয়ে রাস্তায় নামছেন।’’
তৃণমূল অবশ্য এই জোটকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে দ্বিতীয় স্থানে কে থাকবে তারই লড়াই চলছে বাম-কংগ্রেস জোট এবং বিজেপির মধ্যে।’’ অন্যদিকে, বিজেপির গ্রামীণ জেলা সভাপতি শিবশঙ্কর বেজ বলেন, ‘‘মানুষ দু’টি দলকেই প্রত্যাখান করেছেন। দু’টি দলই রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।’’