কোনা এক্সপ্রেসওয়ে চালু, ইন্টারনেট বন্ধ হাওড়ায়

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৪
Share:

শান্তি মিছিলে রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায়(মাঝখানে)।—ছবি পিটিআই।

চব্বিশ ঘণ্টা পরেও এলাকা থমথমে। শান্তির বার্তা দিতে রাজ্যের মন্ত্রী মিছিল করছেন এলাকায়। সেতুর উপরে দাঁড় করানো পুড়ে যাওয়া বাস, গাড়ি, স্কুটার। এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। রবিবার সকালে এমনই ছিল হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উনসানি -গরফা মোড়। নয়া নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে শনিবার দুপুরে ওই এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। জেলাশাসকের তরফে চব্বিশ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ দিন।

Advertisement

ওই ঘটনার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার রাতে ওই এলাকার মুসলিম নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি রবিবার শিবপুর ট্রাম ডিপো থেকে শান্তি মিছিল করেন রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায়।

এ দিকে জেলাশাসকের পক্ষ থেকে রবিবার বিকাল থেকে সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটি নোটিস জারি করে গোটা হাওড়ায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে।

Advertisement

এ দিন উনসানি গরফা এলাকা আপাত ভাবে অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ছিল কম। তবে শনিবারের অশান্তির জেরে গরফা রেল সেতুর উপরে পুড়ে যায় পুলিশের গাড়ি, একটি স্কুটার ও একটি পোড়া বাস। এ দিনও সেগুলি ওই অবস্থায় সেখানেই ছিল। রাস্তার ধারে পড়েছিল দগ্ধ টায়ার, আধপোড়া গাছের গুঁড়ি। এ সব ছবি রবিবার সকালেও বুঝিয়ে দিচ্ছিল শনিবারের তাণ্ডবের পরিমাণ ঠিক কতটা ছিল।

এলাকার মানুষ অবশ্য এ দিন তাণ্ডবের জন‌্য পুলিশকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উনসানি এলাকার সংখ্যালঘু মানুষ দু’ঘণ্টার জন্য কোনা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁদের দাবি, টায়ার পুড়িয়ে যখন শান্তির্পূণ অবরোধ চলছিল তখন পুলিশ হঠাৎ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে। তখনই উত্তেজিত জনতা পাথর ছুঁড়তে শুরু করে।

এলাকার বাসিন্দা ইমারতি দ্রব্যের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেদের বোঝাতে চেষ্টা করি যে হাইওয়ে এত ক্ষণ অবরোধ করা যায় না। ছে‌লেরা যখন অবরোধ তোলার পরিক‌ল্পনা করছে তখনই পুলিশ আচমকা লাঠি চালায়। তার পরেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।’’ যদিও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনাকে দুঃখজনক ঘটনা বলে মনে করেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন ‘‘গতকাল পুলিশ লাঠি চালানোর পরে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতী ওই ঘটনায় ঢুকে পড়ে ওই তাণ্ডব চালিয়েছে।’’

একই অভিযোগ এলাকার বাসিন্দা আমিরুল গাজিরও। তিনিও পুলিশের ভূমিকাকে নিন্দা করে বলেন, ‘‘পুলিশ লাঠি না চালালে এত বড় ঘটনা ঘটত না। কারণ অবরোধকারীরা শান্তিতেই অবরোধ করছিলেন। সব অ্যাম্বুল্যান্সকেই যেতে সাহায্য করা হছিল।’’

যদিও পুলিশের পাল্টা দাবি, গরফা সেতু থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ার পরেই তারা লাঠি চালায়। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য্য দেখিয়েছে। শনিবার পুলিশ আগে লাঠি চালিয়েছে এ কথা ঠিক নয়।’’

এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কিছু দোকানপাট খুলেছে। কয়েকটি ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গরফা সেতুর উপরে পোড়া বাসটি এ দিন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলেও অগ্নিদগ্ধ অন্য আটটি বাস সরিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে সাঁতরাগাছি টার্মিনাসের ভিতরে। এলাকায় ফের যাতে কো‌নও গোলমাল না হয় সে কারণে দিনভর পুলিশের গাড়ি টহল দিয়েছে।

এ দিকে এ দিন সকালে ট্রামডিপো থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তি মিছিল করেন সমবায়মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপবাবু। তিনি বলেন,‘‘মিছিল থেকে বার্তা দেওয়া হয় বাংলা থেকে কোনও মানুষ বিতাড়িত হবেন না। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন সর্বশক্তি দিয়ে এনআরসি রুখবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement