প্রতীকী ছবি।
পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করাতে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে রাজ্য শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনকে। হাওড়া জেলাতে এই কাজে সাড়া পড়েছে। মিশনের অধীনে থাকা শিক্ষকেরা তালিকা ধরে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারে যাচ্ছেন এবং স্কুলছুটদের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন।
জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক বুলবুল বাগচি বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে ভাল সাড়া পড়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেক ছেলেমেয়েই স্কুলে ভর্তি হয়েছে।’’
সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনেই দীর্ঘদিন ধরে স্কুলছুটদের ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে রাজ্যে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা করে সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে থাকা স্কুল শিক্ষকেরা ৬-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলছুটদের স্কুলে ভর্তি করানোর দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হল পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলির ছেলেমেয়েরাও।
লকডাউনের পর রাজ্যে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক সপরিবারে ফিরেছেন। বর্তমানে তাঁদের অনেকে কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে ফিরে
গেলেও এ বার আর পরিবার নিয়ে যাননি। ফলে, লকডাউনের আগে তাঁদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভিন্ রাজ্যের স্কুলে পড়লেও এখানে ফিরে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে। তাদের স্কুলে ফেরাতেই বিশেষ অভিযান বলে জানিয়েছেন রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের এক কর্তা।
কোন পদ্ধতিতে কাজ হচ্ছে?
মিশন সূত্রের খবর, প্রতিটি ব্লক প্রশাসনের কাছ থেকে কোন কোন পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলি থেকে গিয়েছে তার তথ্য নেওয়া হয়েছে। তারপরে স্কুল শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন চক্রে সর্বশিক্ষা মিশনের দায়িত্বে যে সব ‘শিক্ষাবন্ধু’ আছেন তাঁদের কাছে সংশ্লিষ্ট চক্রে কতজন পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার আছে তার তালিকা ও ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকেরা সেই সব পরিবারের কাছে গিয়ে কতজন স্কুলছুট আছে সেই তথ্য সংগ্রহ করে তাদের কাছাকাছি প্রাথমিক ও হাইস্কুলগুলিতে ভর্তি করাতে উদ্যোগী হয়েছেন।
বাগনানের মেল্লক গ্রামের সুশান্ত কর্মকার মহারাষ্ট্রের থানেতে একটি রিসর্টে কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকছিলেন। লকডাউনের পরে ফিরে আসেন। সম্প্রতি তিনি ফের থানে রওনা হন। স্ত্রী-ছেলেমেয়ে থেকে গিয়েছেন এখানেই। সুশান্তবাবুর মেয়ে থানেতে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ত। এখানে ফিরে সে স্কুলছুট হয়ে পড়েছিল। শুক্রবার তার সঙ্গে মেল্লক প্রাথমিক স্কুল থেকে যোগযোগ করে তাকে ভর্তির ফর্ম দিয়ে আসা হয়েছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর সে ভর্তি হবে, এমনটিই স্কুল থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সুশান্তবাবু জানান। থানে থেকে মোবাইলে তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের পড়ার ব্যাপারে খুব চিন্তায় ছিলাম। স্কুল থেকে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন শিক্ষকেরা। মেয়ে স্কুলে ভর্তি হবে জেনে খুব ভাল লাগছে।’’