বাধা দেওয়ায় শ্লীলতাহানি, মারধর

তিরোলে পাট্টার জমি দখলের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে

সিপিএমের আমলে ‘চাষ ও বসবাসের ভূমিদান’ প্রকল্পে জমির পাট্টা পেয়েছিলেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেই জমি দখল করে সেখানে জোর করে নির্মাণের অভিযোগ তুলেছেন জমির পাট্টাপ্রাপকেরা। ঘটনাটি আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের সাহালালপুর মৌজার। রবিবার সকালে জমিতে বেআইনি নির্মাণে বাধা দিতে গেলে পাট্টাপাপকদের মধ্যে এক মহিলার শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০২:২৬
Share:

পাট্টা দেওয়া জমিতে সেই বিতর্কিত নির্মাণ। ছবি: মোহন দাস।

সিপিএমের আমলে ‘চাষ ও বসবাসের ভূমিদান’ প্রকল্পে জমির পাট্টা পেয়েছিলেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেই জমি দখল করে সেখানে জোর করে নির্মাণের অভিযোগ তুলেছেন জমির পাট্টাপ্রাপকেরা। ঘটনাটি আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের সাহালালপুর মৌজার।

Advertisement

রবিবার সকালে জমিতে বেআইনি নির্মাণে বাধা দিতে গেলে পাট্টাপাপকদের মধ্যে এক মহিলার শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। মায়ের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে ওই মহিলার ছেলেকেও তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। নির্যাতিতা ওই মহিলা স্থানীয় তৃণমূলের যুব নেতা মীর চঞ্চল এবং বিপ্লব দাস-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মীর চঞ্চল বলেন, ‘‘মারধর বা শ্লীলতাহানির অভিযোগ মিথ্যা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সিপিএমের আমলে পাট্টা পাওয়া ওই সব জমির মালিকানার হদিস না থাকাতেই আমাদের দলের কর্মীদের সেখানে দোকান করে রুটি রুজির ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।’’ পুলিশ জানিয়ছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।

ভোটের মুখে দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে এ হেন অভিযোগ নিয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল। আরামবাগের দলীয় প্রার্থী ও বিদায়ী বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “দলের পক্ষ থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে সরকারের আমলেই জমির পাট্টা দেওয়া হোক না কেন, যাঁরা পাট্টা পেয়েছেন তাঁরা যে দলেরই সমর্থক হোন তাঁদের জায়গা কেউ দখল করার চেষ্টা করলে তারা যে দ০লেরই হোক না কেন পুলিশ-প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিক।”

Advertisement

আরামবাগ ব্লক প্রশাসন এবং ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষ ও বসবাসের ভূমিদান প্রকল্পে ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সাহালালপুর মৌজার ১৯ জন ভূমিহীন দরিদ্রকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছিল।এর জন্য সাহালালপুরের ১৭৬/১ মৌজার ১৮৮৩, ২৫১০, ও ১৯০৮ দাগের মোট ১ একর ৭১ শতক জমি চিহ্নিত করা হয়।

তারপর চার বছর কেটে গেলেও সেই জমি বিলি না হওয়ায় জমির অভাবে রাস্তার পাশে ঝুপড়িবাসী হয়েই থাকতে হচ্ছে ১৯টি পরিবারকে। পাট্টা প্রাপকদের অভিযোগ, দু’বছর ধরে মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর সংবলিত আবেদন সহ প্রশাসনের নানা জায়গায় দরবার করেও কিছু হয়নি।

মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসুর আশ্বাস, জমি বিলিবন্টন নিয়ে যে সব সমস্যা রয়েছে সেগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত যাতে বসবাসের উপযোগী করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।

সমস্যাগুলো কি?

ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে খবর, ২০১২ সালের জুলাই মাস নাগাদ জরিপের কাজ করতে দিয়ে দেখা যায় ওই জমির সীমানার মধ্যে প্রায় সাত কাঠার একটি পুকুর রয়েছে। কিন্তু ওই জমির দলিলে তার উল্লেখ নেই। সেই সময় প্রশাসনিকভাবে পুকুরের সমস্যার উল্ল্যেখ করে প্রকল্পটি আটকে ছিল। পরে পুকুরের সমস্যা মিটলেও চিহ্নিত জমির পাশে যে রাস্তাটি গিয়েছে সেই রাস্তাটি পাট্টা প্রাপকদের ব্যবহার করতে দিতে আপত্তি তুলেছেন নজমির মালিকরা। এই অবস্থায় বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু সেই রাস্তার জন্য জমি মিলছে না।

পাট্টা প্রাপকদের মধ্যে বাবলু সর্দার, সনাতন চালক, ঝর্না সেন, লুসু সর্দার, কিরীটি লায়েক, ভোলা সর্দার, পরমেশ্বর সেন, প্রমুখদের ক্ষোভ, পাট্টা পাওয়ার পর চার বছর কেটে গেলেও প্রশাসনের গাফিলতিতে এখনও জমির অধিকার পেলাম না। তাঁদের দাবি রাস্তা নিয়ে সমস্যা থাকলে তা পরে ভাবুক প্রশাসন। আপাতত জমি বিলি করা হোক। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার তৃণমূল নেতারা হুমকি দিচ্ছে এ বার বিধানসভা ভোটে তৃণমূল জিতলে পাট্টা পাওয়া সব জমি দখল করে নেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement