সমাগম: হরিপালের বন্দিপুরে খেলা শেষে। ছবি: দীপঙ্কর দে।
মাঠটা টিন, ত্রিপল আর চট দিয়ে ঘেরা। গেটে মাথাপিছু টিকিট দেখে তবে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মিলছে। পাশেই কাউন্টারে টিকিট বিক্রি চলছে। আর মাইকে ঘোষণা। ভিতরে অবশ্য যাত্রাপালা, সার্কাস বা ম্যাজিক শো হচ্ছে না। চলছে নকআউট ফুটবলের ফাইনাল।
হুগলির শহরাঞ্চলে যখন ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা মাঠে লোক না হওয়ায় বিমর্ষ, সেখানে গ্রামেগঞ্জে ফুটবল খেলা দেখতে উপচে পড়ছে ভিড়।
গোটা শীতকাল জুড়ে হরিপাল, চণ্ডীতলা-সহ হুগলির বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কোথাও স্কুল মাঠ, কোথাও বা ক্লাবের মাঠ। সব জায়গায় প্রমাণ সাইজের মাঠ নেই। সে জন্য কোনও প্রতিযোগিতা নাইন-এ-সাইড, কোনওটা সেভেন-এ-সাইড।
নালিকুল স্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বন্দিপুর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের মাঠ। গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে সেখানে এক পক্ষ ধরে নাইন-এ-সাইড নকআউট ফুটবল হয়ে গেল। রবিবার ছিল ফাইনাল। টিকিটের দাম ১৫ টাকা। পৌষ সংক্রান্তির দুপুরে মিঠে রোদ গায়ে মেখে মাঠে ভিড় করেছিলেন হাজার তিনেক দর্শক। গ্যালারি নেই। সাইড লাইনের ধারে সার দিয়ে দাঁড়ানো দর্শক। খেলার আগে কচিকাঁচাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল মাঠের মাঝে। আতসবাজির প্রদর্শনী হল। খেলা চলাকালীন চিৎকার করে নাগাড়ে খেলোয়াড়দের উৎসাহ জুগিয়ে গেলেন দর্শকরা। ফাইনালে হেরেও মঞ্চে উঠে রেফারিং এবং দর্শকের প্রশংসা করে গেলেন রানার্স দলের কর্মকর্তা। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থা ছিল স্পনসর হিসেবে। শহরে মহকুমাস্তরের ফুটবলারদের অনেকেরই বক্তব্য, গ্রামের এমন দর্শক-ঠাসা মাঠে খেলার অনুভূতিটাই আলাদা!
রবিবার চণ্ডীতলা-১ এর গঙ্গাধরপুরের রাধাগোবিন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে এক দিনের ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়ে গেল। স্থানীয় যুব সঙ্ঘ মাঠে দিন-রাতের ওই প্রতিযোগিতা দেখতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লোক এসেছিলেন। টিকিটের দাম ছিল ৩০ টাকা। চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স— দু’দলেই দু’জন নাইজেরিয়ান মাঠে দাপিয়ে বেড়ালেন। চ্যাম্পিয়ন দলকে নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং রানার্স দলকে নগদ ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হল। গত ছাব্বিশ বছর ধরে এই প্রতিযোগিতা চলে আসছে। এ দিনই নালিকুল স্টেশন লাগোয়া একটি মাঠে নক আউট ফুটবল প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালের প্রচার চলছিল। টিকিট মূল্য— ১০ টাকা।
বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতিযোগিতা চলে আসছে। প্রতিযোগিতা শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মাইকে প্রচার চালানো হয়। পোস্টার সাঁটা হয়। টিকিট বিক্রির টাকাতেই প্রতিযোগিতার খরচ উঠে আসে। বাকি টাকা ক্লাবের উন্নয়নে খরচ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাও প্রচারের বিনিময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
শ্রীরামপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক তরুণ মিত্র বা চন্দননগর স্পোর্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বামাপদ চট্টোপাধ্যায়দের বক্তব্য, ময়দানের নামী খেলোয়াড়রা লিগে বা সাধারণ প্রতিযোগিতায় নামেন না। তাই মানুষজন মাঠমুখো হচ্ছেন না। গ্রামে নামী খেলোয়াড় নয়, খেলার টানেই মানুষ মাঠ ভরাচ্ছেন। অতিরিক্ত মোবাইল বা ইন্টারনেট নির্ভরতাও শহরে দর্শক কমার কারণ বলে তাঁরা মনে করেন। ওই দুই ক্রীড়াকর্তার কথায়, ‘‘একটা সময় এখানেও প্রচুর লোক মাঠে আসত। কী করে সেই দিন ফিরবে, তা ভাবা হচ্ছে।’’