হাওড়া পুরসভা।
প্রায় ২৫০ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া রয়েছে সম্পত্তিকরের ক্ষেত্রে। ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সেই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি। অর্থাৎ মোট বকেয়া করের পরিমাণ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা! সম্প্রতি রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে গিয়ে এই তথ্য সামনে আসায় চোখ কপালে উঠেছে হাওড়া পুরসভার আধিকারিকদের। তাই এ বার সম্পত্তিকর ও ট্রেড লাইসেন্স কর আদায়ে কোমর বেঁধে নামছে পুরসভা।
দৈনন্দিন খরচ মেটাতে গিয়ে বছরে প্রায় ২০ কোটির ঘাটতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল হাওড়া পুরসভা। সে কারণেই রাজস্ব আদায়ে জোর দিয়েছিলেন পুর আধিকারিকেরা। তখনই দেখা যায়, দীর্ঘ তিন দশক ধরে সব ক’টি ওয়ার্ডের সম্পত্তিকরের নবীকরণ হয়নি। ফলে হাওড়া শহরের বহু সম্পত্তির করকাঠামো ব্যবস্থা আগের মতই রয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ যে জায়গায় তিনতলা পাকা বাড়ি উঠেছে, সেখানে এখনও আগের মতোই টালির চালের একতলা বাড়ির কর নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে অনেক বহুতল আছে, যেখানে মিউটেশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বছরের পর বছর কোটি কোটি সম্পত্তিকর বকেয়া পড়ে আছে।
হাওড়া পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তৎকালীন মেয়র পারিষদ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ৪২টি ওয়ার্ডের জেনারেল রিভিশন শেষ করে ১১টি ওয়ার্ডে নতুন হারে কর নেওয়া শুরু করেছিলেন। পুরসভার সংযুক্ত এলাকায় ২৭ হাজার বাড়ির মিউটেশন করে ৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল দীর্ঘ কয়েক দশক পরে। যদিও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় শেষ পর্যন্ত জেনারেল রিভিশন বাতিল করে নতুন হারে সম্পত্তিকর নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল পুরসভা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ট্রেড লাইসেন্সের নবীকরণও।
পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশ্য এখন রাজস্ব আদায়ে জোর দিয়েছে হাওড়া পুরসভা। বকেয়া সম্পত্তিকরের পরিমাণ কত তা খোঁজ করে জানা গিয়েছে, গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে মিউটেশন নিয়ে জটিলতার কারণে হাওড়ার বেশ কিছু আবাসনের বকেয়া সম্পত্তিকরের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। যেমন শুধু শিবপুরের একটি আবাসনেরই দেড় কোটি টাকা সম্পত্তিকর বাকি রয়েছে। এ বিষয়ে হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘এই জটিলতাগুলি মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। আগামী দিনে ওই আবাসনগুলিতে ক্যাম্প করে সম্পত্তিকর নেওয়া হবে।’’
একই ভাবে কয়েক দশক ধরেই ট্রেড লাইসেন্সের নবীকরণ নিয়ে বহু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল পুরসভা। তার পরেই ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ ও নতুন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কাজ অনলাইনে চালু করা হয়। প্রথমে কিছু সমস্যা থাকলেও পরে কাজে গতি আসে। তখনই বিপুল বকেয়া করের তথ্য নজরে আসে পুর আধিকারিকদের।
পুর কমিশনার বলেন, ‘‘পুরনো নথিপত্র অনুযায়ী, হাওড়ায় এক লক্ষ ৬০ হাজার ট্রেড লাইসেন্সের রেকর্ড থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৭০ হাজার লাইসেন্সের নবীকরণ করা হচ্ছে। বাকি প্রায় ৯০ হাজার লাইসেন্সের নবীকরণ করা হচ্ছে না। সেই ব্যবসার সবগুলি বন্ধ হয়ে গেছে নাকি এখনও চালু আছে, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হচ্ছে।’’