দিনেদুপুরে ফাঁকা রাস্তায় তিন ছিনতাইবাজকে কার্যত একা হাতে রুখে দিলেন এক গৃহবধূ। শুধু তাই নয়, ওই মহিলার চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা বেরিয়ে পড়ায় দুষ্কৃতীরা ওয়ান শটার বার করেও কাজ হাসিল করতে পারল না। মারমুখী জনতার সামনে পড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ফেলেই চম্পট দিল তারা। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে দু’টি ওয়ান শটারই গুলি-সহ উদ্ধার করে।
শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট এলাকার কাসুন্দিয়া রোডে তারের জাল কারখানার কাছে। দিনের বেলা এমন ঘটনায় এলাকার নিরাপত্তা ও নজরদারিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে।
কী ঘটেছিল এ দিন?
পুলিশ সূত্রে খবর, দুপুর ২টো নাগাদ এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফিরছিলেন ঝুম্পা দত্ত নামে ওই গৃহবধূ। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হলেও দুপুরে রাস্তায় তখন গাড়ি এবং লোকজন বেশ কম ছিল। ঝুম্পা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি বাড়ির গলির মুখে আসতেই উল্টো দিক থেকে একটি মোটরবাইক এসে দাঁড়ায়। তাতে চালক ছাড়াও ছিল দু’জন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই দুই যুবক নেমে এসে তাঁর সোনার হারের দিকে হাত বাড়ায়। কী ঘটতে চলেছে, আঁচ করতে পেরে ঝুম্পা এক দুষ্কৃতীর হাত সজোরে চেপে ধরে চিৎকার শুরু করেন। টানা-হেঁচড়া চলে কিছুক্ষণ। বেগতিক দেখে অন্য এক দুষ্কৃতী পকেট থেকে ওয়ান শটার বার করে।
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘‘আমার চিৎকারে ততক্ষণে পাড়ার লোকেরা বেরিয়ে এসেছেন। যে ছেলেটাকে ধরে রেখেছিলাম, সে-ও জোর করে হাত ছাড়িয়ে পকেট থেকে একটা আগ্নেয়াস্ত্র বার করে। কিন্তু পাড়ার লোকেদের ছুটে আসতে দেখে ওরা আর দাঁড়ায়নি। হুড়োহুড়ি করে মোটরবাইকে চেপে পালাতে গিয়ে দুটো আগ্নেয়াস্ত্রই রাস্তায় ফেলে দেয়।’’
এ দিকে, ঘটনার খবর জানাজানি হতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া দু’টি ওয়ান শটার ও দু’রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দুষ্কৃতীদের বয়স ২২-২৩ বছরের মধ্যে। ঘটনার পরেই ওই দলটি মোটরবাইক নিয়ে ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের দিকে পালায়। পুলিশ জানিয়েছে, এর কিছুক্ষণ পরেই হাওড়া থানা এলাকার লক্ষ্মণ দাস লেনে রমা দাস নামে এক প্রৌঢ়ার হার ছিনতাই করে পালায় মোটরবাইকে আসা তিন দুষ্কৃতী। দু’টি ঘটনাই একই দলের কাজ কি না, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কয়েক জনকে গ্রেফতারের পরে এই ধরনের ছিনতাই অনেকটাই কমেছিল। মনে হচ্ছে, ছিনতাইবাজদের নতুন কোনও দল তৈরি হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।’’