মঞ্চস্থ: শল্যপর্ব নাটকের একটি দৃশ্য। —নিজস্ব িচত্র
চিকিৎসা কি শুধু পেশা? নার্সিংহোম মানে কি কেবল ব্যবসা?
নাকি, এই পেশার সাথে মানবিকতা, মূল্যবোধও যুক্ত! অসহায় মানুষ যখন চিকিৎসককে তাঁর জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে দেন, তখন চিকিৎসকের দায়বদ্ধতা ঠিক কতটা জরুরি?
উত্তরপাড়ার সমতট নাট্যমেলায় এই প্রশ্ন তুলে দিল বারাসাত অনুশীলনীর নাটক ‘শল্যপর্ব’। অনবদ্য অভিনয় আর টানটান উত্তেজনা ভরা এই নাটক দর্শকদের কাছে খুবই উপভোগ্য হয়েছে। অভিনয়ে তাঁর জাত চিনিয়েছেন রজত গঙ্গোপাধ্যায়, বাবু দত্ত রায় এবং মুরারী মুখোপাধ্যায়। পরিচালনায় রুদ্রতেজ সেনগুপ্ত ও বিজয় মুখোপাধ্যায়।
শীতে উত্তরপাড়ার গণভবনে নাটক দেখা এখন অভ্যাসে পরিণত করেছেন স্থানীয়েরা। টানা দু’দশক ধরে সমতট নাট্যমেলা তাদের বাৎসরিক বিনোদনের অঙ্গ। এ বার নতুন সাজে সেজেছে গণভবন। টানা দেড় বছর ধরে এই প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের কাজ হয়। সমতটের কর্ণধার বাসুদেব হুই এ বার নাট্যমেলা উদ্বোধন করিয়েছেন সেই সব মানুষদের দিয়ে, যাঁরা
এতদিন ধরে এই প্রেক্ষাগৃহকে
নতুন ভাবে রূপ দিয়েছেন। মোট ন’জন মঞ্চ নির্মাতাকে তাঁরা সম্মান জানান। তাঁদের মধ্যে অনিমেষ ঘোষ এবং জয়ন্ত নাগ অন্যতম। গত ২১ ডিসেম্বর উদ্বোধনে ছিলেন পুরপ্রধান দিলীপ যাদব এবং সমতটের সভাপতি বরুণ সেনগুপ্ত।
প্রথম দিন মঞ্চস্থ হয় চার্বাকের নতুন নাটক ‘ভীতি ও শুভেচ্ছা’। কমেডির মোড়কে একটি সমকালীন নাটক। বয়স হয়ে যাওয়ার পর বেশিরভাগ মানুষ যখন সংসারে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যান, তাঁদের জীবন কেমন হয়? আজকাল ফ্ল্যাট বা আবাসনের দৈনন্দিন জীবন কেমন? মানুষ তো সামাজিক জীব, কেন তাঁরা একা হয়ে যান? কখনও কি জীবনকে ফিরে দেখা যায়? শুধরে নেওয়া যায় নিজের ভুলগুলো? এই রকম কিছু জরুরি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পরিচালক খেয়ালি দস্তিদার। তিনি অভিয়নও করেছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী এবং অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়।
দ্বিতীয় দিনে ছিল কার্টেন কলের নতুন নাটক ‘ভুনিবাবুর চাঁদনী’। নাট্যরূপ শর্মিলা মৈত্র, নির্দেশনা তীর্থঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। অস্কার ওয়াইল্ডের ‘ক্যান্টারভিল ঘোস্ট’ কাহিনিটি সব সময়ই আনন্দ দিয়েছে রসিক পাঠককে। এই কাহিনি অবলম্বনেই ওই নাটক। কমিক চরিত্র ভুনিবাবু ও তার সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন যথাক্রমে গৌতম হালদার ও গম্ভীরা। সিন্ডবার্গের ‘দ্য ফাদার’ অনুপ্রাণিত উষ্ণীকের নতুন নাটক ‘বাবাই’-ও আনন্দ দিয়েছে দর্শকদের। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপড়েন এই নাটকের বিষয়। নাট্যরূপ ও পরিচালনা ঈশিতা মুখোপাধ্যায়। মুখ্য চরিত্রে ছিলেন দেবশঙ্কর হালদার, ছন্দা চট্টোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ও শ্রীজাতা। মধ্যবিত্তের ঢেকে রাখা সম্পর্কের রূঢ় বাস্তবতা উন্মোচিত হয়েছে এই প্রযোজনায়।
লুইজি পিরানদেল্লোর ‘অল ফর দ্য বেস্ট’ নাটকের অনুপ্রেরণায় চন্দন সেনের নাটক ‘ভালো লোক’-ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। মুখ্য চরিত্রে ও পরিচালনায় মেঘনাদ ভট্টাচার্য। পিরানদেল্লোকে রেখে চন্দন সেন ও মেঘনাদ ভট্টাচার্য আরেকবার সফল নাটক উপহার দিলেন বাংলার দর্শককে। নাট্যমেলা চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।