সারি সারি: আরামবাগ হাসপাতালের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র
মাতৃযান তথা নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স ঠিক সময়ে না পৌঁছনোয় বাড়িতে বা রাস্তায় প্রসব হওয়ার নজির হুগলি জেলায় অনেক। মাতৃযানের জন্য ‘১০২’ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা যথাযথ মিলছে না—এই অভিযোগ তুলে বিভিন্ন ব্লক এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতরে আশা কর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, স্মারকলিপি লেগেই আছে। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি।
১০২ অ্যাম্বুল্যান্স প্রকল্পটির সফলতা নিয়ে বিব্রত হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “১০২ ডায়ালে ফোন করার দু’থেকে আড়াই ঘণ্টা পরও মাতৃযান পাচ্ছেন না প্রসূতি। অনেককেই নিজেদের গাড়ি ভাড়া করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। অথচ ওই গাড়ির অভাব নেই। পুরো বিষয়টা ওই বিভাগের রাজ্য স্তরের এজেন্সিকে আমরা জানিয়েছি।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রসূতিকে হাসপাতালমুখী করে প্রসূতি এবং সদ্যোজাত মৃত্যু ঠেকাতে ২০১০ সাল মাস নাগাদ নিশ্চয়যান প্রকল্প চালু করে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে হুগলিতে এই প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পে প্রসূতি তো বটেই, তাঁর শিশু জন্মের এক বছর পর্যন্ত অসুস্থ হলে নিখরচায় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন স্থানীয় স্তরের ব্যাক্তিগত মালিকানার নিশ্চয়যানগুলির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ‘১০২’ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে টোল ফ্রি ১০২ নম্বরে ফোন করলেই ২৪ ঘণ্টাই সহজে অ্যাম্বুল্যান্স মেলার কথা।
হুগলির জেলা, মহকুমা এবং ব্লক হাসপাতালগুলির জন্য মোট ৪৪টি ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স বরাদ্দ আছে। এছাড়া ব্যক্তিগত মালিকানার মাতৃযান বরাদ্দ আছে ২৪টি। স্বাস্থ্য দফতরের মতে বিভিন্ন জায়গায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের অনুপাত অনুযায়ী ওই অ্যাম্বুল্যান্স সংখ্যা যথেষ্ট। জেলায় গড়ে বছরে প্রসূতির সংখ্যা ৬৪ হাজারের মত। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে প্রসব হন ৪০ হাজার। বাকিরা অন্য জেলার সরকারি হাসপাতাল, পুরসভা এলাকা বা বেসরকারি হাসপাতালে প্রসব হন। এই অবস্থায় জেলা জুড়ে মোট ৬৮টা অ্যাম্বল্যান্স ঠিকভাবে পরিষেবা দিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু মাস খানেক আগেই পুরশুড়ার শ্রীরামপুর এলাকার পম্পা শীট নামে এক প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ, বারবার ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। ওই প্রসূতিকে পুরশুড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পথে মোটরবাইকেই প্রসব করেছিলেন ওই মহিলা। সদ্যোজাত পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। ধকলে গুরুতর জখম হয়েছিলেন প্রসূতিও। ওই দিনই সকালে হাসপাতালের ফটকে অন্য এক ভাড়া গাড়িতেই প্রসব করেছিলেন আরও এক প্রসূতি।
আশা কর্মীদের পক্ষে পুরশুড়ার তাপসী দাঁ, আরামবাগের আবিদা খাতুন প্রমুখর অভিযোগ, ১০২ নম্বরে ডায়াল করে সাড়া মিলছে না। আবার কখনও সাড়া মিললেও গাড়ি পেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করা প্রসূতিকে বা অসুস্থ শিশুকে ততক্ষণ বাড়িতে ফেলে রেখে ঝুঁকি নেওয়া যায় না। নিখরচায় পরিষেবা পাওয়ার কথা থাকলেও দুঃস্থদের গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতাল আসতে হচ্ছে। আশা কর্মীদের আরও অভিযোগ, “এত গাড়ি থাকা সত্ত্বেও প্রকল্পটি এখনও প্রত্যন্ত এলাকায় পরিষেবা দিতে পারছে না। নানা অজুহাতে গাড়ির চালকরা অনেক সময় যেতে চান না। গেলেও কোথাও আবার রোগীদের কাছে বাড়তি টাকা চান।” এই অনিয়ম নিয়ে প্রসূতিদের পরিবার এবং আশা কর্মীদের তরফে অভিযোগ হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।
জেলায় ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স তদারকির দায়িত্বে থাকা রাণা ভদ্র বলেন, “জেলার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অনেক সময় অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। যেমন নদী ঘেরা আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু গাড়ি নিশ্চিতভাবেই যায়।’’