তছনছ: ঘর ছারখার হয়ে গিয়েছে বিস্ফোরণে। সোমবার নন্দীবাগানে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
সিলিন্ডারের গ্যাস লিক করেই বিস্ফোরণ হয় হাওড়ার নন্দীবাগানে। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এমনই মতামত দিয়েছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, গ্যাসের ওভেন বন্ধ থাকলেও সিলিন্ডারের নব খোলা ছিল। ওভেন থেকে যে পাইপ গ্যাস সিলিন্ডারে গিয়েছে সেই পাইপে কোনও ভাবে ফুটো হয়ে গিয়েছিল। ওই ফুটো দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘরের সমস্ত দরজা জানলা বন্ধ থাকায় গ্যাস বেরোনোর জায়গা না পেয়ে এক সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হাওড়ার গোলাবাড়ি এলাকার নন্দীবাগানের রামকুমার ঘোষ লেনের একটি পাঁচতলা বাড়ির উপরের তলার একটি বন্ধ ঘরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। তখন বাড়ির বাসিন্দারা কেউ ছিলেন না। বিস্ফোরণের জেরে গোটা বাড়িটি কেঁপে ওঠে। পাঁচতলার ঘরের দেওয়াল ধসে পড়ে এক তলায়। মাথার উপরে অ্যাসবেস্টসের চাল সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। জানলা খুলে উড়ে যায় পাশের বাড়ির ছাদে। টিভির স্ক্রিন ভেঙে যায়। উল্টে যায় সব আসবাবপত্র। বিকট শব্দের জেরে পাশের একটি বহুতলে আড়াই বছরের এক শিশু ভয় পেয়ে মেঝেয় ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। এই ঘটনার পরে ঘনবসতিপূর্ণ নন্দীবাগান এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। তদন্তে আসেন পুলিশকর্তারা। খবর যায় দমকলে। তাঁরা গ্যাস সিলিন্ডার-কিন্তু কী ভাবে বিস্ফোরণ হল তা রাত পর্যন্ত পরিষ্কার না হওয়ায় খবর দেওয়া হয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের।
এ দিন নন্দীবাগান এলাকার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তখনও আতঙ্কে বাসিন্দারা। একতলার মানু দেবী বলেন, ‘‘রান্না করছিলাম। হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর শব্দ। তার পরেই দেখি আমার ঘরের সামনে এসে পড়েছে একটা আস্ত পাঁচিল। গোটা বাড়িতে এত ধুলো ভর্তি হয়ে গিয়েছিল যে কিছুক্ষণ কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।’’
আগের রাতের সেই আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না চার তলার বাসিন্দা কুলদীপ শর্মা বা সার্বেন্দ ধুরির। কুলদীপ বলেন, ‘‘গত কালের ঘটনার পরে এই বাড়ির অনেকেরই ঘরে হাঁড়ি চড়েনি। কী ভাবে এই বিস্ফোরণ হল তা নিয়ে সকলেই চিন্তায় ছিলেন।’’
এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ নন্দীবাগানের ওই বাড়িতে ওয়াসিম রাজার নেতৃত্বে তদন্তে আসে তিন জনের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল। তাঁরা পাঁচ তলার উপরে ওই ঘরে গিয়ে পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে বেরোনোর সময়ে ওয়াসিম রাজা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সিলিন্ডার থেকে বেরোনো গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওভেনের সঙ্গে যে পাইপ থাকে তাতে ফুটো থাকায় গ্যাস বেরিয়ে ঘরে জমে থাকার পরেই বিস্ফোরণ হয়েছে।’’