মঞ্চস্থ: করোনা সচেতনতায় চলছে নাটক। —নিজস্ব চিত্র
করোনা ত্রাসে ওষ্ঠাগত জনজীবন! ভাইরাসের ছোঁয়াচ এড়াতে জনগণকে সচেতন করতে নিজে মুখে মাস্ক জড়িয়ে করজোড়ে বুঝিয়ে চলেছেন দেবর্ষি নারদ!মহাদেবও নন্দী-ভৃঙ্গীকে নিয়ে একই ভূমিকায়! মা দুর্গাও খুন্তি হাতে উপস্থিত! দুর্গাপুজোর এখনও এক মাস দেরি। তবে নাটকের কুশীলবদের হাত ধরে কৈলাসের দেবদেবীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন রিষড়া শহরের নানা প্রান্তে। তাঁদের সংলাপ থেকেই পথচারীরা জানতে পারছেন, এই কঠিন সময়ে ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হাস্যরসের মাধ্যমেই বর্তমান সময়ে সুস্থ থাকার চাবিকাঠির হদিশ দিতেই পুলিশের উদ্যোগে এই পথনাটক। শেষ দৃশ্যে ঢাক, কাঁসর, শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে দেবীর আরতি এবং ‘করোনাসুর’ নিধনে কার্যত দুর্গাপুজোরই ঢাকে কাঠি পড়ছে।
গত মার্চ মাস থেকে লকডাউনের সময় মানুষকে গৃহবন্দি রাখতে চেষ্টার কসুর করেনি পুলিশ। এখন আনলক-পর্ব চলছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে অনেকাংশেই। তবে, সংক্রমণ থামেনি। সেই কারণে মাস্ক পরা-সহ আরও কিছু সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে বই কমেনি। কখনও ধমকে, কখনও তাড়া করে, কখনও গান গেয়ে, কখনও বা লাঠির দাওয়াইতে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন আইনের রক্ষকেরা। রিষড়ায় সেই তালিকায় নবতম সংযোগজন এই পথনাটক। নাট্যদল ‘রিষড়া দূরায়ন’ ৩০ মিনিটের ওই নাটক করছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যে ‘পুলিশ দিবস’ পালিত হয়। ওই দিন রিষড়া থানায় প্রথম মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। তার পরে শহরের বাগপাড়া, চারবাতি, ব্রহ্মতলা প্রভৃতি জায়গায় অভিনীত হয়। নাটকের ১২ জন চরিত্র অভিনয়ের মুন্সিয়ানায় দর্শকের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমেও এই প্রচেষ্টা সাড়া ফেলেছে।পরিচালক দীপ চক্রবর্তী থেকে শিল্পী রূপম বসু, স্বাগতা পণ্ডিত, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, নীলাঞ্জনা রায়দের বক্তব্য, করোনা নিয়ে অকারণ ভীতির কারণে সমাজে নানা রকম সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমিতদের পরিবারের লোক এবং প্রতিবেশীরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ভাবছেন না। অথচ, নিজেরাই অবিবেচকের মতো মাস্কবিহীন অবস্থায় ঘুরছেন। কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত একই ভুল করছেন। নাটকের মাধ্যমে এই ধরনের লোকজনকে সচেতন করাই তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য।
রূপম বলেন, ‘‘পুলিশকর্মীরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই কঠিন সময়ে কাজ করছেন। তার মধ্যেই রিষড়া থানার ওসি প্রবীর দত্তের উদ্যোগে এই শহরে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতিকে সামনে রেখে পুলিশ যে ভাবে মানুষকে বোঝানোর কাজ করছে, তা সাধুবাদযোগ্য।’’ থানার এক আধিকারিক জানান, নাটকে কয়েক জন পুলিশকর্মীকেও শামিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।