বাঁধ ছাপানো জলে ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রমের পাঁচিল। —নিজস্ব চিত্র।
জোয়ারের সময় জলস্ফীতি তো রয়েছেই, তার উপরে কাছ দিয়ে যাওয়া জাহাজের ঢেউয়ের তোড়ে মাঝেমধ্যেই উলুবেড়িয়ার কালীনগর পূর্ব এলাকার নদীবাঁধ ছাপিয়ে প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়। ইতিমধ্যে কয়েক বার প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, নদীবাঁধ এবং নদী সংলগ্ন একটি আশ্রম। জলের তোড়ে আহত হয়েছেন কয়েক জন। আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে বা নদীবাঁধ সারানোর ব্যবস্থা না হলে পরে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কালীনগরের উল্টো দিকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিকে গঙ্গায় ক্রমশ চর পড়তে থাকায় উলুবে়ড়িয়ার দিকের নদীবাঁধ জলের চাপে ক্ষয়ে যাচ্ছে। এ দিকেই নদীর গভীরতাও বেশি। ফলে, ছোটবড় সব জাহাজ উলুবেড়িয়ার দিক থেকেই যাতায়াত করছে। তার ফলেই সমস্যা বাড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে প্রশাসনের নানা মহলে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে নদীবাঁধের কাছ থেকে অবাধে পলিমাটি কেটে নিচ্ছে যাচ্ছে কিছু লোক। যার ফলেও সমস্যা হচ্ছে।
সেচ দফতরের উলুবেড়িয়া শাখার এসডিও গৌতম অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। কালীনগরের দেড় কিলোমিটার এলাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। পুজোর পরে ওই এলাকা মাপজোক করা হবে এবং নদীগর্ভে বাঁশের খাঁচা ফেলে পলি আটকে বাঁধের ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা করা হবে।’’ তবে, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় পরিস্থিতির জন্য পোর্ট ট্রাস্টের উপরেই দোষ চাপিয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘পোর্ট ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানিয়েছি। তারা ঠিকমতো ড্রেজিং না করাতেই এই সমস্যা।’’
কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘প্রাকৃতিক নিয়মেই উলুবেড়িয়ায় দিকের নদীবাঁধের ক্ষয় বেশি হচ্ছে। জলের গভীরতা বেশি থাকায় জাহাজ ওই দিক দিয়েই যাতায়াত করছে। বাঁধ মেরামতির দায়িত্ব সেচ দফতর এবং জলপথ উন্নয়ন নিগমের।’’
বাঁধ মেরামতি নিয়ে সেচ দফতরের গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, বাঁধের কিছু জায়গা বোল্ডার ফেলে বাঁধানো হলেও কালীনগর সংলগ্ন বাঁশতলা এবং পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় এখনও সে কাজ হয়নি। এ জন্য সেচ দফতর অবশ্য অর্থাভাবকেই দায়ী করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা অলোক চক্রবতী, গৌতম বেরারা বলেন, ‘‘বিপদ মাথায় নিয়ে বেঁচে রয়েছি। আমরা চাই প্রশাসন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করুক।’’