Cyclone Amphan

‘সিইএসসি-র অপদার্থতা ক্ষমার অযোগ্য’

বাড়ির ছোট ছেলে হলেও সুকান্ত না-থাকলে তারকেশ্বরের সন্তোষপুর গ্রামের সিংহরায় পরিবার চোখে অন্ধকার দেখত।

Advertisement

দীপঙ্কর দে

তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০১:৩২
Share:

মৃত দমকল কর্মী সুকান্ত সিংহরায়ের শোকার্ত পরিবার। ছবি: দীপঙ্কর দে

লকডাউনে তিনি চার দিন করে ‘ডিউটি’ করছিলেন। তারপর আট দিন ছুটি। এ ভাবেই চলছিল।

Advertisement

ছুটিতে বাড়িতেও কী কম কাজ! রান্নাঘরের কাজে বৌদিকে সাহায্য করা, মাঝেমধ্যে চা বানানো, কিডনির অসুখে ভোগা মাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া, নতুন বাড়ির জানলা রং করা...সব তিনিই সামলাতেন।

বাড়ির ছোট ছেলে হলেও সুকান্ত না-থাকলে তারকেশ্বরের সন্তোষপুর গ্রামের সিংহরায় পরিবার চোখে অন্ধকার দেখত। বছর সাতাশের সেই সুকান্ত চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছেন বুধবার। বেলুড়ে জিটি রোডে বিদ্যুতের তারের উপরে ভেঙে পড়া গাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বালি দমকল কেন্দ্রে ডেপুটেশনে আসা ওই চুক্তিভিত্তিক দমকলকর্মীর। ঘটনায় সিইএসসি-র তিন কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দুর্ঘটনায় সিইএসসি-র ভূমিকা প্রসঙ্গে কড়া মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁদের গাফিলতিতে এই মৃত্যু, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন মৃতের বাবা সুশান্তবাবু। একই দাবি সুকান্তের বন্ধুদেরও। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘সিইএসসি-র অপদার্থতা ক্ষমার অযোগ্য।’’

Advertisement

প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সুশান্তবাবুর দুই ছেলে। বড় সুদীপ্ত তারকেশ্বর দমকল কেন্দ্রের কর্মী। ছোট সুকান্তও ২০১৬ সালে দমকলে যোগ দেন। তার আগে বছর দেড়েক তারকেশ্বর থানায় সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করেছিলেন হরিপাল বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তন ছাত্র। বাড়ির পাশেই নিজেদের জমিতে নতুন বাড়ি করছে সিংহরায় পরিবার। কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু সেই নতুন বাড়িতে আর থাকা হল না সুকান্তের।

বৃহস্পতিবার সন্তোষপুরে গিয়ে দেখা যায়, সুকান্তদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-পড়শির ভিড়। তারকেশ্বরের বিডিও রশ্মিদীপ্ত বিশ্বাস প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুশান্তবাবুদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে যান। সুকান্তের মা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। ছেলেবেলা থেকে সুকান্ত কী ভাবে পাড়া-পড়শির আপদে-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন সে আলোচনাও চলছিল। সুদীপ্ত বলেন, ‘‘ভাই-ই ছিল আমাদের সংসারের সব। সব দিকে ওর নজর ছিল। নতুন বাড়ির দরজা-জানলাও ও নিজের হাতে রং করছিল। রান্নাঘরের কাজে আমার স্ত্রীকে ও কত সাহায্য করত! ওর এই অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছি না।’’

তারকেশ্বর থেকে নিজের মোটরবাইকেই বালিতে কাজে যেতেন সুকান্ত। বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় বেরিয়েছিলেন। ৮টায় কাজে যোগ দিয়ে বাবাকে ফোন করেছিলেন। তার কিছুক্ষণ বাদে ফের ফোন করে বাবাকে পাম্প চালানোর কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। দুপুরে ওই দুর্ঘটনার কথা জানতে পারে পরিবার। খবর পেয়ে বালিতে যান সুকান্তের বাবা-দাদা। রাত ৯টা নাগাদ বৈদ্যবাটীর হাতিশালা ঘাটে সুকান্তের শেষকৃত্য হয়।

গত বছরই ওই যুবকের উদ্যোগে পাড়ায় প্রথম দুর্গাপুজো চালু হয়। তাঁর অকালমৃ্ত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বন্ধুরা। সন্তোষপুরের পাশের গ্রাম নারায়ণপুরে বন্ধু লাল্টু রাউতের জামাকাপড় তৈরির দোকানেই বেশি আড্ডা দিতেন সুকান্ত। বন্ধু আর নেই, মানতে পারছেন না লাল্টু। তাঁর খেদ, ‘‘কতটা গাফিলতি থাকলে এ ভাবে একজনের মৃত্যু হয়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement