একতলার ঘর দাউদাউ করে জ্বলছে। আগুনের শিখা উঠছে উপরের দিকে। আর তিনতলার জানলার গ্রিল ধরে তারস্বরে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করছেন এক প্রৌঢ়।
আমতলা বাজারে মঙ্গলবার মাঝরাতে এমন দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন আশপাশ থেকে ছুটে আসা মানুষজন। ঘটনাটি বুঝে সকলেই প্রাণপণ চেষ্টা করেন ওই প্রৌঢ়কে বাঁচাতে। তবে শেষরক্ষা হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ের নাম আব্বাসউদ্দিন মল্লিক (৫৫)। তাঁর বাড়ি বিষ্ণুপুরের ন’হাজারিতে। আমতলা বাজারে ওই তিনতলা বাড়িটির একতলায় আব্বাসউদ্দিনের কাপড়ের দোকান। দোতলায় ছিল গুদাম। তিনতলার ঘরে আব্বাসউদ্দিন নিজে থাকতেন। এ দিনের ঘটনার পরে পুলিশ তাঁর মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়।
আমতলা বাজারের ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দেবাশিস দে। বুধবার সকালে তিনি জানান, রাত সাড়ে ৩টে নাদাগ প্রচণ্ড শোরগোলে ঘুম ভেঙে গেলে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনিও। দেখেন বাড়িটির একতলা ততক্ষণে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নিয়েছে আগুন। ক্রমে তা উঠছে উপরের দিকে। আর তিনতলার জানলা থেকে চিৎকার করে সাহায্য চাইছেন আব্বাসউদ্দিন। দেবাশিস জানান, স্থানীয়েরা আগেই বেহালার শীলপাড়া দমকল স্টেশনে খবর দিয়েছিলেন। চল্লিশ মিনিটের মাথায় তিনটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছয়। ততক্ষণ স্থানীয়েরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো ওই রাতেও দোকানের শাটার নামিয়ে ভিতর থেকে তাতে তালা লাগিয়ে তিনতলায় ঘুমোতে গিয়েছিলেন আব্বাসউদ্দিন। একতলায় আগুন লাগার কারণে নীচে নেমে আসতে পারেননি তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৪টে নাগাদ প্রৌঢ়র চিৎকার থেমে যায়। দমকলের ইঞ্জিন প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সূত্রের খবর, শাটার ভেঙে তিনতলায় উঠে দমকলকর্মীরা দেখেন আব্বাসউদ্দিনের অগ্নিদগ্ধ নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। দেবাশিস বলেন, ‘‘গরম লোহা যেমন লাল হয়, ওই রাতে আগুনের তাপে দোকানের শাটারও তেমনই লাল হয়ে গিয়েছিল। তা থেকে এতটাই তাপ বেরোচ্ছিল যে, কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা বাইরে থেকে ওই শাটারের উপরেই বারবার জল ঢালতে থাকি। তাতেও কোনও কাজ হয়নি।’’
এ দিনের ঘটনার জন্য পরিকাঠামোগত অব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার সব পুকুর বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, মঙ্গলবার রাতে দরকারের সময়ে দমকলকে পাঁচশো মিটার দূরে একটি পুকুর থেকে জল আনতে হয়েছে। কাছাকাছি জলের উৎস থাকলে আগুন আরও তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনা যেত বলে ধারণা তাঁদের। দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিটের জেরেই প্রথমে আগুন লাগে। দোকানে ও গুদামে কাপড়ের পাশাপাশি কিছু দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায়, অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন ভয়াবহ চেহারা নেয়। ওই দোকানে যথাযথ অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে বলে দমকল সূত্রের খবর।