নিজস্ব চিত্র।
প্রস্তুতি শেষ করে এ বার উৎসবে মেতে ওঠার পালা। গরাদের আড়ালে তো কী! প্রতি বছরের মতো এ বারও উলুবেড়িয়া মহকুমা সংশোধনাগারের মধ্যে বসবে ইদের জামাত (নমাজের আসর)। মুসলিম বিচারাধীন বন্দিরা জামাতে দাঁড়িয়ে নমাজে অংশ নেবেন। নমাজ শেষে পরস্পর মেতে উঠবেন ভালবাসার আলিঙ্গনে। সংশোধনাগারের বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজনের কথা মনে করে তাঁদের কারও কারও চোখ হয়ে উঠবে অশ্রুসজল। ইদ মানে যে মিলনেরও উৎসব তা বিলক্ষণ মানেন সংশোধনাগারের কর্তারাও। জেলার পুলক মণ্ডল এবং জেল সুপার তথা উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক পন্নমবলম এস বলেন, ‘‘আমরা জানি ইদ হল মিলনের উৎসব। এমন দিনে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কথা মনে করে বিচারাধীন বন্দিদের কারও কারও মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। তাই আমরা সকলে মিলে জাতি ধর্মের বিভেদ ভুলে ওইদিন আনন্দে মেতে উঠি। একটু অন্যরকম খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়। বিচারাধীন সমস্ত বন্দি এবং সংশোধনাগারের আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীরা সকলে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন।’’
উলুবেড়িয়া মহকুমা সংশোধনাগারে বর্তমানে দেড়শো জন বিচারাধীন বন্দি রয়েছেন। তাঁদের প্রায় ৫০ জন মুসলমান। ইদ উপলক্ষে তাঁদের জন্য সংশোধনাগারের ভিতরেই আলাদা করে ঈদগাহ তৈরি করে তা রঙিন কাগজে সাজানো হয়েছে। ঈদগাহ সাজানোর কাজটি করে থাকেন বন্দিরাই। সংশোধনাগারের পক্ষ থেকে স্থানীয় মসজিদের ইমামকে আনা হয় নমাজ পড়ানোর জন্য। নমাজে শুধুমাত্র মুসলিম বিচারাধীন বন্দিরা অংশ নিলেও অন্য ধর্মের মানুষও প্রার্থনায় সামিল হন।
সংশোধনাগার সূত্রের খবর, এ বারও প্রথা মেনে ইদ উৎসব পালন করা হবে সংশোধনাগারে। নমাজের পরে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। এ বার মেনু লাচ্চা-সিমাই, পরোটা, পায়েস, মাংস। কোথা থেকে সংস্থান হয় টাকার?
সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, এর জন্য সরকারের তরফে সে ভাবে আলাদা করে কিছু বরাদ্দ করা হয় না। বিচারাধীন বন্দিদের খাওয়ার জন্য বছরভর যে বাজেট থাকে তা থেকে উৎসবের জন্য কিছু বাঁচিয়ে রাখা হয়। অবশ্যই তা করা হয় বন্দিদের সম্মতি নিয়ে। সংশোধনাগারের পদস্থ আধিকারিকরাও চাঁদা দেন। তার থেকেই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। জেলার বলেন, ‘‘শুধু ইদ নয়, দুর্গাপুজো-সহ সব বড় ধর্মীয় উৎসবই পালন করা হয় সংশোধনাগারে। সবাই তাতে যোগদান করেন।’’