ঐতিহাসিক: এই সংগ্রহশালায় রাখা হচ্ছে শ্রীরামকৃষ্ণের শেষকৃত্য সংক্রান্ত নথি (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র
১৩৩ বছর আগে উত্তর কলকাতার কাশীপুর মহাশ্মশানের গঙ্গাতীরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের। সে দিন দাহকার্যের সময়ে কী লেখা হয়েছিল শ্মশানের রেজিস্টারে? কে-ই বা সই করেছিলেন তাতে? ঐতিহাসিক সেই সব নথিই এ বার দেখা যাবে বেলুড় মঠের সংগ্রহশালায়।
ব্রিটিশ আমলের ওই সব নথিপত্র আজও রাখা আছে কলকাতা পুরসভার মহাফেজখানায়। পুরসভা সূত্রের খবর, শ্রীরামকৃষ্ণের পাশাপাশি আরও অনেক মনীষীর শেষকৃত্যের নথি রয়েছে সেখানে। ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, সম্প্রতি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তরফে শ্রীরামকৃষ্ণের শেষকৃত্যের নথি চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদনে সাড়া দিয়েই পুর প্রশাসন শ্মশানের সেই রেজিস্টারের অবিকল নকল একটি বই মিশন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে। তিনি আরও জানান, পুরনো ওই সব নথির কাগজ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। অমূল্য নথিগুলি সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
১৮৮৬ সালের ১৬ অগস্ট শ্রীরামকৃষ্ণ প্রয়াত হন। তাঁকে বরাহনগরের শেষ প্রান্ত এবং কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের (তৎকালীন চিৎপুর পুরসভা) শুরুতে থাকা কাশীপুর মহাশ্মশানে দাহ করা হয়েছিল। নিয়মানুযায়ী দাহকার্যের আগে শ্মশানের রেজিস্টারে প্রয়াত ব্যক্তির সম্পর্কে সমস্ত তথ্য নথিবদ্ধ করতে হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। পুরসভার কাছে সংরক্ষিত রেজিস্টারে দেখা যাচ্ছে, ক্রমিক নম্বর: ৯৫০। নাম: রামকিষ্ট পরমহংস। বয়স: ৫২ বছর। মৃত্যুর কারণ: গলায় ঘা। আর সে দিন রামকৃষ্ণদেবের দেহ নিয়ে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের পক্ষে গিরিশচন্দ্র ঘোষ সই করেছিলেন রেজিস্টারে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বেলুড় মঠ সূত্রের খবর, পুরসভার তরফে তথ্যগুলি টাইপ করা একটি কাগজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তরফে আসল নথিটি চেয়ে আবেদন জানানো হয়। পুরসভা সূত্রের খবর, রেজিস্টারের যে পাতায় শ্রীরামকৃষ্ণের সৎকারের তথ্য লেখা রয়েছে, সেটি স্ক্যান করে দেওয়া হবে।
এমনকি, রেজিস্টারের অবিকল নকল একটি বই তৈরি করা হচ্ছে, যাতে ওই পাতা-সহ অন্য কয়েকটি পাতাও থাকবে। ইতিমধ্যেই অতীনবাবু পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের সেটি বিশেষ ভাবে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। যা দেখে মনে হবে, পুরনো রেজিস্টারটিই বেলুড় মঠের সংগ্রহশালায় রয়েছে।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘এটি খুবই আনন্দের সংবাদ যে, পুরসভা ওই নথির প্রতিলিপি আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজকের দিনে রামকৃষ্ণ পরমহংস একটি আন্দোলন ও আধুনিক পৃথিবীর পথ প্রদর্শক। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, এই বেলুড় মঠ থেকেই এক আধ্যাত্মিক প্লাবন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তাই এই নথি দর্শনার্থীদের কাছে একটি অমূল্য সম্পদ।’’
কাঁকুড়গাছির রামকৃষ্ণ মঠ যোগোদ্যানের অধ্যক্ষ তথা সংগ্রহশালার ভারপ্রাপ্ত সন্ন্যাসী স্বামী বিমলাত্মানন্দ জানান, শ্রীরামকৃষ্ণ, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি-বিজড়িত বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে একটি সংগ্রহশালা প্রথমে তৈরি হয়েছিল বেলুড় মঠে পুরনো মিশন অফিসের দোতলায়। ১৯৯৪ সালে সেটির উদ্বোধন করেছিলেন সঙ্ঘের ১২তম প্রেসিডেন্ট, স্বামী ভূতেশানন্দ। দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকায় সংগ্রহশালাটি অন্যত্র তৈরির পরিকল্পনা হয়। ১৯৯৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নতুন সংগ্রহশালার শিলান্যাস করেন স্বামী ভূতেশানন্দ। ২০০১ সালের ৭ মে সংগ্রহশালাটির উদ্বোধন করেন সঙ্ঘের ১৩তম প্রেসিডেন্ট, স্বামী রঙ্গনাথানন্দ।
বেলুড় মঠে ঢুকে কিছুটা এগিয়ে বাঁ হাতে রয়েছে রামকৃষ্ণ সংগ্রহ মন্দির। সংগ্রহশালাটি দেখতে ফোটা পদ্মের মতো। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যবহৃত সবুজ গলাবন্ধ কোট, গামছা, জামা, পাঞ্জাবি, কাপ-প্লেট, কমণ্ডলু, গাড়ু, বিছানা-বালিশ, হাতের লেখা-সহ বিভিন্ন জিনিস রয়েছে। তার সঙ্গেই এ বার যুক্ত হবে শেষকৃত্যের নথিও। এ ছাড়া, সারদাদেবী, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত সামগ্রী এবং ঘটনাবলীর ছবিও রয়েছে ওই সংগ্রহশালায়।