প্রতীকী ছবি
ছোটবেলা থেকেই ব্রেকফাস্ট না-হলেও চলে যায়। কিন্তু খবরের কাগজ না-হলে সকালটা যেন খালি খালি লাগে। সামান্য কিছু সরকারি ছুটির দিন বাদে খবরের কাগজ কখনও বন্ধ থাকবে, এটা ভাবনাতে আনতে পারি না আজও। কিন্তু রোগের আতঙ্ক, উৎকন্ঠায় এই দৈনন্দিন অভ্যাসেও যেন থাবা বসিয়েছে কোভিড-১৯।
এখন অতিমারি জীবনের প্রতিটি স্বাভাবিক ছন্দেই যেন পতনের হাতছানি নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের দুয়ারে। অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু আমরা তলিয়ে দেখছি না। সেই না-দেখার নেপথ্যে অকাট্য যুক্তি— সংক্রমণ।
মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়া থেকেই গুঞ্জন উঠতে শুরু করে দিল, ঠিক কতখানি নিরাপদ আমাদের এই একটা তাজা দিন শুরুর আবহমান কালের অভ্যাস? সকালের খবরের কাগজে সংক্রমণ অনিবার্য নয়তো? শহরের কোনও কোনও আবাসনে তো ভেন্ডারদের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হল। কাগজ, পত্রিকার দোকান/স্টল বন্ধ করে দেওয়া হল। আতঙ্কে কেউ কেউ শুরু করলেন ক্ষীণতনু ই-ভার্সন পড়া। আলোচনা গড়াল কোর্ট, সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) অবধি। সত্যিই তো প্রাণহীন বস্তুও জীবাণু বহন করতে পারে!
মুম্বই হাইকোর্ট কিন্তু রায় দিল, দোকানে জিনিস যখন বিক্রি হচ্ছে তখন পত্রিকা বিলি-ব্যবস্থা বন্ধ করার সরকারি নির্দেশ অযৌক্তিক। মার্চ মাসেই চেন্নাই হাইকোর্ট রায় দেয়, সংবাদপত্র বন্ধ করা প্রকাশক ও পড়ুয়াদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। এ তো গেল আইনের কথাবার্তা।
কী বলছে বিজ্ঞান?
ল্যাবরেটরিতে দেখা গিয়েছে, ধাতব সামগ্রী, প্লাস্টিক ইত্যাদি মসৃণ বস্তুতে করোনা জীবাণু অনেকক্ষণ সময় বেঁচে থাকে। অমসৃণ (যেমন, কাগজ) কোনও বস্তুতে কম। কারণ জীবাণুটি ড্রপলেট বা জলীয় পদার্থ ছাড়া বাঁচতে পারে না। নামী সংবাদপত্র ছাপানোর পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় এবং তাতে সিসা এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার জন্য এর দ্বারা জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণ প্রায় অসম্ভব।
আদতে করোনার দূরত্ববিধির সঙ্গে আমাদের কিন্তু বিজ্ঞান বা সমাজের সঙ্গে মানসিক দূরত্ববিধি বাড়ালে চলবে না। ঠিক বিপরীতমুখী হতে হবে। আর এটা ভাবলেও চলবে না, সংবাদমাধ্যম নিজেদের তাগিদেই শুধু এটা প্রচার করছে। শেষ বিচারে একজন চিকিৎসকের কিন্তু এই করোনার অসময়ে দায়িত্বটুকু অনেকটা সেনার মতো। আমরা একেবারে সামনে থেকে এই লড়াইটা লড়ছি। তাই এই লেখার সবটুকু দায় কিন্তু আমরাই এখন তুলে নিচ্ছি।
সংবাদপত্রের অভাবে লকডাউন অবস্থায় মানুষের মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পেতে পারে। আর বিলি-ব্যবস্থা? ভেন্ডাররা যদি আপামর জনগণের মতোই সাবধানতা নেন, (মাস্ক পরা, হাত মাঝেমধ্যে স্যানিটাইজ় করা ইত্যাদি) তা হলে তাঁদের মাধ্যমে জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণও প্রায় অসম্ভব। খুব সাবধান হতে চাইলে পত্রিকা পরিবারের সদস্যদের বাইরে না-যাওয়াই ভাল। হু মার্চ মাসের শেষেই জানিয়ে দেয় সংবাদপত্র নিরাপদ।
তবে গবেষণা এখনও চলছে। করোনা নিয়েই চলতে হবে আগামী বেশ কয়েকটি মাস। আর তাই সকালের খবরের কাগজকে কোন যুক্তিতে আমরা ব্রাত্য করে রাখব? তা হলে কিন্তু বেঁচে থাকার প্রতিদিনকার অন্যতম সংবাদের রসদটুকু জীবন থেকে বাদ চলে যাবে।