বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন নেতারা।— নিজস্ব চিত্র।
আয়োজনে খামতি ছিল না। দলীয় কার্যালয়ে ডাঁই করা ছিল পতাকা। কিন্তু ঘাড়ে করে সেই পতাকা বইবে কে? সকাল থেকে কোনও কর্মীই আসেনি। সিপিএম নেতারা ফোনে ডাকাডাকি করেও হাজির করাতে পারেননি যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী-সমর্থকদের। ফলে বাতিলই করে দিতে হল মিছিলের কর্মসূচি। শুক্রবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল উলুবেড়িয়া শহরে।
শহরের গরুহাটা মাঠে রয়েছে সিপিএমের আঞ্চলিক কার্যালয়। সেখান থেকেই জমায়েত করে মিছিল করার কথা ছিল। বামফ্রন্টের নামে মিছিলের ডাক দেওয়া হলেও, এর মূল হোতা ছিল সিপিএম। বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের কেউই এ দিন আসেননি। দোতলা বাড়িতে সকাল থেকে হাজির হয়েছিলেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন দলের উলুবেড়িয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক তথা তৃণমূল শাসিত পুরসভায় বিরোধী দলনেতা সাবিরুদ্দিন মোল্লা, ছিলেন পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশীতিপর বটকৃষ্ণ দাসও। সকাল ৮টার সময়েই হাজির হয়েছিলেন তাঁরা। ধীরে ধীরে হাজির হন আরও কয়েকজন। তার আগে তিনপুকুর মাঠে একটি ছোটখাট জমায়েত করে সিপিএম। সেখান থেকেই সকলে চলে আসেন দলীয় কার্যালয়ে।
এ দিকে ধর্মঘট শুরু হয়ে গিয়েছে সকাল ৬টা থেকে। দলীয় কার্যালয়ে বসে চিন্তায় পড়ে যান নেতারা। মিনিট থেকে ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে। এগিয়ে চলেছে ঘড়ির কাঁটা। কিন্তু কোথায় কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা না এলে মিছিল হবে কী করে! একেবারেই যে কেউ আসেননি তা নয়। সব মিলিয়ে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ জোগাড় হল সাকুল্যে মাত্র ১৭ জন। এত কম লোক নিয়ে কি মিছিল করা উচিত? আলোচনা শুরু হল নেতাদের মধ্যে। এক নেতা বললেন, ‘‘লোক যত কমই হোক না কেন, মিছিল করার দরকার আছে।’’ অন্য পক্ষের মত হল, ‘‘এমনিতেই অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। তার উপরে এত কম লোক নিয়ে মিছিল করলে হাস্যাস্পদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ এমনকী কম লোক নিয়ে মিছিল করলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করলেন অনেকে।
অথচ এক সময় উলুবেড়িয়ায় সিপিএমের দাপট ছিল বেশ ভালই। ২০১০ সাল পর্যন্ত পুরসভার দখল ছিল সিপিএমের হাতে। তবে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর থেকে উলুবেড়িয়ায় শক্তিক্ষয় হতে শুরু করে সিপিএমের। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সিপিএমের অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই বলে একটা মিছিল বের করতে পারল না? ধর্মঘটে এ দিন উলুবেড়িয়া শহরে মিশ্র সাড়া পড়ে। ওটি রোডের দু’দিকে বেশিরভাগ দোকাই খোলা ছিল। তবে কিছু ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। দলের প্রবীণ নেতা বটকৃষ্ণ দাস বলে উঠলেন, ‘‘বেলা হয়ে গিয়েছে, এখন আর ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করার কোনও মানে হয় না। তবে যে সব ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রেখেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানানোর জন্য একটা মিছিল করা যেতে পারে।’’ কিন্তু তাঁর মত খারিজ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত মিছিলের সিদ্ধান্ত বাতিলই করা হল। তারপরে দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যে যার মতো বাড়ি চলে গেলেন নেতারা।
বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বললেন, ‘‘এই ধর্মঘট ডেকেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। তাই মিছিল নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।’’