Amta

ফিরুক পরিযায়ী শ্রমিকরা, সর্বদলীয় সিদ্ধান্ত রসপুরে

রসপুর পঞ্চায়েতটি তৃণমূল শাসিত। এই পঞ্চায়েতের ১২টি আসনের সবগুলিই তৃণমূলের দখলে। তবুও সর্বদলীয় বৈঠকের প্রস্তাবটি আনা হয়েছে তৃণমূলেরই উদ্যোগে।

Advertisement

নুরুল আবসার

আমতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০২:৫৫
Share:

বাড়ির পথে পরিযায়ী শ্রমিকরা। বীরশিবপুরে। ছবি:সুব্রত জানা

করোনা আবহে মুছে গেল রাজনৈতিক ভেদাভেদ। বিশেষ ট্রেন পরিষেবা চালু হওয়ায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে গ্রামে ফিরে আসছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তাঁদের নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তা দেখার জন্য সর্বদলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা বৈঠকে বসেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্রামে ফেরা নিয়ে যাতে কোনওরকম সমস্যা তৈরি না হয় সেটা তাঁরা যৌথভাবে দেখার জন্য সর্বসম্মত নীতি তৈরি করেছেন।

Advertisement

রসপুর পঞ্চায়েতটি তৃণমূল শাসিত। এই পঞ্চায়েতের ১২টি আসনের সবগুলিই তৃণমূলের দখলে। তবুও সর্বদলীয় বৈঠকের প্রস্তাবটি আনা হয়েছে তৃণমূলেরই উদ্যোগে। বৈঠক হয় পঞ্চায়েত অফিসে। সেখানে হাজির থাকার জন্য চিঠি দেওয়া হয় বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্বকে। এই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপির উলুবেড়িয়া উত্তর ১ নম্বর মণ্ডল কমিটির সহ সভাপতি শক্তি মালিক বলেন, ‘‘করোনা মোকাবিলায় এখন সবারই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা প্রয়োজন। দলের পক্ষ থেকে আমি বৈঠকে যোগ দিই।’’ অন্যদিকে রসপুর পঞ্চায়েত এলাকার সিপিএমের আমতা ১ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক আনন্দ মাজিও বৈঠকে যোগ দেন।

তৃণমূল নেতা তথা রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েত এলাকার বহু মানুষ কর্মসূত্রে বাইরের রাজ্যে থাকেন। তাঁরা ফিরে আসছেন। নিয়মানুযায়ী জেলা এবং ব্লক থেকে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। যদি কারও গৃহ নিভৃতবাসের নিদান দেওয়া হয় তিনি তাঁর বাড়িতে ফিরে সেখানেই থাকবেন। আমাদের কাজ হবে, তাঁরা বাড়িতে ফিরলে যেন অন্যায়ভাবে তাঁদের বাধা না দেওয়া হয়। আমরাও গ্রামবাসীদের নিশ্চিত করব যাতে ওই ব্যক্তিরা গৃহ নিভৃতবাসের সমস্ত নিয়ম মেনে চলেন। এটা আমরা সব দলের প্রতিনিধিরা মিলে নজরে রাখব।’’

Advertisement

বিভিন্ন গ্রামে ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে, যাঁরা বাইরে থেকে আসেন তাঁদের নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়। স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে গৃহ নিভৃতবাসের নিদান আনলেও তাঁদের গ্রামবাসীরা তাড়িয়ে দেন। অযথা তাঁদের নিয়ে প্রশাসনের ভোগান্তিও হয়। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর যদি কাউকে গৃহ নিভৃতবাসের জন্য পরামর্শ দেয়, তাহলে কাউকেই তাড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। আমাদের এলাকাতেও যাতে সেটা না হয়, তা যৌথভাবে দেখা হবে।’’

এর উল্টো দিকও আছে বলে জয়ন্তবাবু জানান। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে আবার গৃহ নিভৃতবাসের নিয়ম মানেন না। কোনওপক্ষ তাঁদের সতর্ক করতে গেলে অন্য পক্ষ তাঁদের মদত দেয়। আমরা সব রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যভাবে নজরদারি

চালাই তা হলে কোনও মদত দেওয়ার ঘটনা ঘটবে না। আসল কথা, করোনার মতো একটা ভয়ঙ্কর ব্যাধির বিরুদ্ধে সবাইকে প্রয়োজনে এক হয়ে লড়াই করতে হবে।’’

জয়ন্তবাবুর বক্তব্য সমর্থন করে শক্তিবাবু বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে রাজনৈতিক লড়াই করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেই লড়াই আগামী দিনেও আমাদের জারি থাকবে। কিন্তু করোনা

নিয়ে রাজনীতি করার জায়গা নেই বলে আমরা মনে করি।’’ একই সুরে কথা বলেন আনন্দবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘এই পঞ্চায়েতে একসময়ে আমরা টানা ক্ষমতায় ছিলাম।

ক্ষমতা আসবে, ক্ষমতা চলেও যাবে। কিন্তু মানুষ থাকবে। তাই মানবতাকে রক্ষা করার জন্য করোনার বিরুদ্ধে যে লড়াই চলছে, তাতে কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ রাখা যাবে না। বেঁচে থাকলে অনেক রাজনীতি করতে পারব।’’

রসপুরে অবশ্য সঙ্কটের সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এক হয়ে লড়াই করার পরম্পরা আছে। ফলে বহু রাজনৈতিক সংঘর্ষ অতীতে

এড়ানো গিয়েছে। সেই পরম্পরা বজায় রেখেই তাঁরা এক ভয়ঙ্কর বিপদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াইয়ে নামছেন বলে জয়ন্তবাবু জানান। একই সুরে মন্তব্য করেন শক্তিবাবু এবং আনন্দবাবু। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এটা একটা অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement