ঋণ নিতে ব্যাঙ্কের কাছে ছুটতে হবে না স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েতে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি করে মহিলা পরিচালিত সমবায় সমিতি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেবে তারাই। প্রাথমিক মূলধন হিসাবে প্রতিটি সমবায়কে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। সমবায়গুলিকে এই প্রাথমিক মূলধন যৌথভাবে দেবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতভিত্তিক সমবায় গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর।
হাওড়া জেলায় ১৫৭টি পঞ্চায়েতে সমবায় গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। অতিরিক্ত জেলাশাসক শঙ্করপ্রসাদ পাল বলেন, ‘‘৬৩টি পঞ্চায়েতে ইতিমধ্যেই সমবায় গঠন হয়েছে। তাদের প্রাথমিক মূলধনও দেওয়া হয়েছে। বাকি পঞ্চায়েতগুলিতেও সমবায় গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’’
মহিলাদের স্বনির্ভর করার নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বর্তমানে যে প্রকল্পের অধীনে এই কাজ করা হচ্ছে তা হল, ‘জাতীয় জীবন ও জীবিকা’ প্রকল্প। রাজ্যে প্রকল্পটির নাম আনন্দধারা। প্রকল্পে গরিব মহিলাদের ছোট ছোট স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে গোষ্ঠীগুলি নিজেরাই ব্যাঙ্কে প্রথমে টাকা জমা দেয়। মাস ছয়েক পরে সেই আমানতের ভিত্তিতে গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়া হয়।
গত কয়েক বছরে গোষ্ঠীগুলির কাজের পরিধি বেড়েছে। ফলে তাদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কের উপর নির্ভরতা কাটিয়ে তারা যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে জন্য উদ্যোগী হয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতভিত্তিক সংগঠন। এগুলিকে বলা হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংঘ। এই সংঘগুলিকেই সমবায় সমিতিতে পরিণত করা হচ্ছে বলে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, যেহেতু ঋণ দেওয়ার আইনি অধিকার একমাত্র সমবায় সমিতিই পেতে পারে। তাই সংঘগুলিকে সমবায়ে পরিণত করা হচ্ছে। এ জন্য রাজ্য সমবায় দফতরকে বলা হয়েছে তারা যেন দ্রুত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংঘগুলিকে সমবায় আইন অনুযায়ী নিবন্ধীকৃত করে।
সমবায় গঠিত হলে তারা কাজকর্ম পরিচালনা করবে পঞ্চায়েত অফিস থেকে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি এই সমবায়ে তাদের প্রাথমিক আমানতের টাকা জমা দিতে পারবে। ঋণও পাবে এখান থেকে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, ব্যাঙ্কে নানা কাজের চাপ থাকে। ফলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ব্যাঙ্কে গেলে তাদের ঋণ বা আমানত জমা দেওয়ার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। নিজেরা সমবায় গড়লে তাদের সেই অসুবিধা অনেকটাই কমবে। শুধু তাই নয়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়া ঋণের সুদ পাবে সমবায়গুলি। এর ফলে তাদের আয়ও হবে। যা ভবিষ্যতে আরও বেশি গোষ্ঠীকে ঋণ দিতে সাহায্য করবে তাদের। এমনকী আয়ের টাকা ব্যাঙ্কে জমা রেখে সেখান থেকেও ঋণ নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দিতে পারবে সমবায়গুলি।